রেলওয়েতে পরিবর্তন আসন্ন!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আবহাওয়াগত পরিবেশের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যমগুলোর মধ্যে শীর্ষে। এদেশে বৃষ্টি ও বন্যায় রাস্তাঘাট সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই সড়কপথে যান চলাচল প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়। আবার আর্থিক ব্যয় বাহুল্যতার কারণে আকাশপথেও যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজসাধ্য নয়। নৌপথে নাব্যতার অভাব এবং বিপুল সংখ্যক নদী মরে যাওয়ায় নৌপথে পরিবহনও কমছে দিন দিন। এ অবস্থায় রেলওয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো উপযোগী পরিবহন ব্যবস্থা। তবে ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া রেলওয়ের উন্নয়নে এ পর্যন্ত যা করা হয়েছে, তার বেশীর ভাগই যাত্রী তথা জনগণের কল্যাণের চেয়ে সংশ্লিষ্ট নেতামন্ত্রী আমলা ও কর্মচারীদের পকেট ভরার স্বার্থে করা হয়েছে। এতো সম্ভাবনাময় রেলওয়েকে একটি শীর্ষ জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে কীভাবে এটা থেকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত আর্থিক ফায়দা হাসিল করা যায়, সেই চেষ্টা চলে এসেছে এতোকাল। এখন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের এই বৃত্ত বা বেষ্টনী ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন। যেহেতু এই সরকার কোন দুর্নীতিবাজ দলীয় সরকার নয় বরং বিপ্লবী ছাত্র-জনতার নিযুক্ত সরকার তাই আশা করা যায়, এবার অন্যান্য খাতের মতো রেলওয়েতেও পরিবর্তন আসবে। এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি প্রকৃত অর্থেই জনগণের স্বার্থে পরিচালিত ও ব্যবহৃত হবে।
সম্প্রতি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডঃ ফাওজুল কবির খান রেলওয়ের সংস্কার ও উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রেনের টিকেটপ্রাপ্তি অধিকতর সহজ, স্বচ্ছ ও যাত্রীবান্ধব করার জন্য বাংলাদেশের রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া দেশের রেলরুটে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি অনলাইনে টিকেট কাটার পদ্ধতি আরো সুবিধাজনক করা হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টিকেটের ক্রয় প্রক্রিয়ায় যাত্রীরা কতটুকু সন্তুষ্ট হতে পারছেন, তা বিবেচ্য। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে কাংখিত গন্তব্যের টিকেট না পেয়ে যাত্রীরা হতাশ হন। সেক্ষেত্রে নিকটস্থ কোন স্টেশনের কোন সময়ের জন্য টিকেট অবশিষ্ট রয়েছে সার্চ অপশনে যাত্রীর নিকট যেনো স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপস্থাপিত হয় সে ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরকারী কর্মকর্তাদের নামে টিকেট বরাদ্দ হচ্ছে রেলওয়ের টিকেট নিয়ে দুর্নীতির একটি নিত্যকার বিষয়। দীর্ঘকাল যাবৎ এ নিয়ে দুর্নীতি ও টিকেট কালোবাজারী চলে আসছে। এখন রেলওয়ে উপদেষ্টা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত কোটার টিকেট বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রেলের সচিব বা কর্মকর্তাদের কাছে অনেক টিকেটের তদবির আসে। সরকারী কর্মকর্তারাও করেন। এজন্য কিছু টিকেট আগেই বুক করে রাখা হয়, এটা চলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রেলওয়ে উপদেষ্টা। তার কথা হচ্ছে, কোন সচিব বা কর্মকর্তার কথায় টিকেট রাখা যাবে না। সেবার আগে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া উপদেষ্টা অধিক সংখ্যক যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য বাড়তি ট্রেন সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় লোকোমোটিভ ও কারেজ সংগ্রহ, যাত্রী বেশী এমন রুটে ট্রেন বাড়ানো, টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধ, উন্মুখ দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ট্রেনের শিডিউল বা সময়সূচী বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
রেলওয়ে এতোদিন জনগণের সেবার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ ও ফায়দা হাসিলের একটি উর্বর ক্ষেত্র ছিলো। নতুন সরকার লুটেরা গোষ্ঠীর হাত থেকে রেলওয়েকে জনগণের একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। রেলওয়ে উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে এটা বুঝা যায়। বাস্তবে যদি এটা করা সম্ভব হয়, তবে দেশের এই অন্যতম জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম প্রকৃত অর্থেই জনগণের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠবে, এমনটি প্রত্যাশা করা যায়।