জ্বর-সর্দি, কাশি, এলার্জির প্রকোপ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৪৪:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক দিনের আবহাওয়ার পরিবর্তন ও গরমের প্রভাবে ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর-সর্দি, কাশি ও এলার্জির রোগী। আক্রান্তরা প্রথমে এলাকার ফার্মেসিগুলো থেকে ওষুধ কিনে সেবন করলেও অনেকেই তাতে সুস্থ হচ্ছেন না। ফলে এসব রোগী ছুটছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে রোগীদের। এছাড়াও প্রাইভেটভাবে চিকিৎসকদের চেম্বারেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে এসব রোগীকে। এতে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার শিশুরা। অনেক জায়গায় কয়েকদিন অপেক্ষা করেও ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছেনা। জ¦র সর্দি ছাড়াও অনেক শিশুদের গায়ে ফুসকুড়ি বা এলার্জির মতো রেশ দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে ভিড় করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে শিশুদের এই রেশ আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ভাইরাস জনিত কারণেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এনিয়ে চিন্তার কিছু নেই জানিয়ে তারা বলেন কিছুদিন বিশ্রাম নিলে আর যত্ন করলে তা সেরে যাবে। সাধারণত সপ্তাহ দশদিন পর তা এমনিতেই সেরে যায়।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল থেকেই টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রোগী ও তাদের স্বজনদের। এর মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের ৪০ শতাংশই জ্বর নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরী ও জেলার প্রায় ঘরে গত এক সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা জ্বর ও সর্দির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আক্রান্তরা জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি, মাথাব্যাথা, গলাব্যাথা অনুভব করছে। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও এই জ্বর কমপক্ষে এক সপ্তাহ ভোগাচ্ছে। কেউ কেউ আবার একাধিকবার জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে বর্তমানে গরমে ঘেমে ঠান্ডা লেগে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন বা ভাইরাস জনিত কারণেই বেশিরভাগ লোকজন অসুস্থ হচ্ছেন। তবে পেটে সংক্রমণ, ফুসফুসে সংক্রমণ, রক্ত স্বল্পতা হলেও জ্বর হয়। ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাল ইনফেকশন বা অন্য বড়ো রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কারো কারো জ্বর হয়। মানুষের শরীরের মধ্যে মেটাবলিজম চলাকালীন যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলতে থাকে, তা থেকেই বাড়তে পারে শরীরের তাপমাত্রা।
তারা বলেন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ নানান কিছু হতে পারে। ফ্লু, চিকেনপক্স, নিউমোনিয়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হিট স্ট্রোক, অ্যালকোহল উইথড্রয়াল, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড থেকে শুরু করে নানা কারণে জ্বর আসতে পারে। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁপুনি, খিদের অভাব, ডিহাইড্রেশন, ডিপ্রেশন, মাথাব্যথা, অবসাদ, ঘুম ঘুম রেশ থাকে। অতিরিক্ত জ্বরে খিঁচুনিও হতে পারে।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, খুব সকাল থেকেই রোগীরা এসেছেন টিকিট কেটে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য। অনেককেই মেডিসিন বিভাগের ডাক্তারের রুমের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ডাক্তার দেখাতে আসা গিয়াস উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা জ্বরে ভুগছি। পার্শ্ববর্তী ফার্মেসি থেকে ওষুধও খেয়েছি কিন্তু জ্বর কমছে না তাই ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি তিনি কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলোর রিপোর্ট দেখে ওষুধ দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, সিভিসি ও এনএস ১ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। নাজমা বেগম নামে আরেকজন জানান, তার ১২ বছর বয়সের মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। মেয়ের বেশ কয়েক দিন ধরেই ঠান্ডা জ্বর ও গলাব্যথা অনুভব করায় প্যারাসিটামল ও নাপা খাইয়েছেন কিন্তু জ্বর কমেনি।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ভিড় বহির্বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে। জ্বরসহ যে কোনো উপসর্গে প্রথমেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা উচিত। অনেকেই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ভুল ওষুধ সেবন করায় পরে বিপদের সম্মুখীন হয়।