সড়কে থামছেনা প্রাণহানী
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ৯:০৪:১৪ অপরাহ্ন
অক্টোবরে ৪৪৩ দুর্ঘটনায় ৪৬৯ মৃত্যু * সিলেটে ২২ দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত * সকালে ও রাতে বেশি দুর্ঘটনা
জালালাবাদ রিপোর্ট: ক্ষমতার পালাবদল হলেও সড়ক ব্যবস্থাপনার কোন উন্নতি হচ্ছেনা। বরং প্রতিদিনই সড়কে ঝরে পড়ছে প্রাণ। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রাণহানী আরো বেড়েছে। এ মাসে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনা সকালে ও রাতে বেশি ঘটেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে অক্টোবরে প্রাণহানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩১টি দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
অক্টোবরে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৭৪ জন ও শিশু ৬৬টি। এছাড়া পেশাগত পরিচয়ে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন ৫৮ জন শিক্ষার্থী। এ সময়ে ২০৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৬ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় ১০২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, অক্টোবরে ৪ নৌ দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। ২১টি রেল দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টমটম) দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত হন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। এছাড়া দুর্ঘটনার ১৭১টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ও ১১২টি মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার সময় :
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫.৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছিল ভোরে, ২৬.৬৩ শতাংশ সকালে, ১৬.৯৩ শতাংশ দুপুরে, ১৫.৫৭ শতাংশ সন্ধ্যা, ৯.২৫ শতাংশ গোধূলি এবং ২৬.১৮ শতাংশ রাতে।
বিভাগ অনুযায়ী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান :
বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ২৯.৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৩০.৭০ শতাংশ গটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ১৫.৩৪ শতাংশ ও মৃত্যুর ১৩.৮৫ শতাংশ হয়েছে রাজশাহী বিভাগে।দুর্ঘটনার ১৭.৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ১৭.২৭ শতাংশ ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮ দশমিক ১০ শতাংশ ঘটেছে খুলনা বিভাগে, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে।
মৃত্যুর পেশাগত বিশ্লেষণ :
প্রকাশিত গণমাধ্যম তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য, দুইজন আনসার সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়জন শিক্ষক এবং চারজন সাংবাদিক ছিলেন। দুর্ঘটনা ও হতাহতের এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
দুর্ঘটনার কারণ :
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও অসুস্থতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। তারা আরও বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার করে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।