মুনতাহা হত্যার আসামীরা ৫ দিনের রিমান্ডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ৯:০৬:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: কানাইঘাটে নৃশংসভাবে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) হত্যা মামলায় সাবেক গৃশিক্ষিকাসহ আটক ৪ আসামীর ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদলের আদালতে বাদী পক্ষের আইনজীবী ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।এর আগে রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে বাড়ীর পাশে^র একটি খালের কাদামাটিতে পুঁতে ফেলা লাশ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে ধরা পরেন সাবেক গৃহশিক্ষিকার মা আলিফজান বিবি (৫৫)। এ সময় তার কাছে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মুনতাহার লাশ উদ্ধার করা হয়।
মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। গ্রেপ্তারকৃত ৪ জনই নিহত মুনতাহাদের প্রতিবেশী বলে জানা গেছে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-কানাইঘাট থানার বীরদল ভাড়ারীফৌদ গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী আলিফজান (৫৫) ও তার মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), একই এলাকায় ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল জানান, ইতোমধ্যে আসামীরা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এরপরও মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডের পেছনে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রফিকুল ইসলাম বলেন, আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে আরো কিছু নাম এসেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আসামীরা রিমান্ডে গেলে আরো বিস্তারিত বলবেন বলে আমার প্রত্যাশা করছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর বিকালে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে নিখোঁজ হন মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬)। এরপর থেকে তার খোঁজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে ব্যাপক প্রচারণা। অনেকের আশা ছিল ফুটফুটে সুন্দর শিশু মুনতাহা সুস্থভাবে মায়ের কোলে ফিরে আসবে। হ্যাঁ সে ফিরেছে, তবে জীবন্ত নয়, লাশ হয়ে।
জানা গেছে, মুনতাহার সন্ধানে কাজ করছিল র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন মুনতাহার পরিবার ও স্বজন। সন্দেহের ভিত্তিতে শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। কিন্তু সে মুনতাহার ব্যাপারে কোন তথ্য না দিয়ে উল্টো স্বাভাবিকভাবে পুলিশের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। তার কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশ মার্জিয়ার পরিবারের উপর নজর রাখার জন্য বলে। তখন মুনতাহার আত্মীয়স্বজন সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশের মাটি খুড়ে তল্লাশি চালান। তখন মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি ঘরের বারান্দায় একটি চেয়ারে বসে অভিযান দেখছিলেন। এক পর্যায়ে অভিযান শেষে সবাই বাড়ীতে ফিরে গেলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা তার কোলে কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
এরপর মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যা ও লাশ গুমে জড়িত থাকায় মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান বিবি ছাড়াও একই গ্রামের মরহুম ছইদুর রহমানের ছেলে ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও মামুন রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগমকে (৩০) রোববার গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার সকালে উদ্ধারের পর মুনতাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বাদ আসর বীরদল পুরানফৌদ জামে মসজিদে জানাজা শেষে গ্রামের পঞ্চায়েত কবরস্থানে মুনতাহার লাশ দাফন করা হয়।