তাগুতের বিরুদ্ধে আমাদের সবার লড়াই এক : লন্ডনে সর্বদলীয় উলামা সমাবেশে ডা. শফিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৪৩:১৪ অপরাহ্ন
ইসলামপন্থী রাজনীতিবীদ, উলামা মাশায়েখ গত ১৬ বছর যে জুলুমের শিকার হয়েছেন তা নজীরবিহীন
লন্ডন থেকে এনাম চৌধুরী: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশের সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যকটি ইসলামী দলের স্বপ্ন আল কোরআনের হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা। সবাই এক আল্লাহ, এক কুরআন, একই নবী মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহান মাবুদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান। দুনিয়ার জীবনে আমরা এক আল্লাহ, একটি ধর্ম ইসলামের প্রতি ঈমান আনয়নকারী। আমরা একে অন্যের দ্বীনি ভাই। আমাদের মধ্যে মাসআলাগত মতানৈক্য থাকলেও ইসলাম, কুরআন, প্রিয়নবী (সাঃ) ও সাহাবাগণ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাজার হাজার কর্মী’র সমাবেশে অন্তরে যে ভালোলাগার অনুভূতি হয় এর চেয়ে হাজারগুণ তৃপ্তি লাগে, মনটা মাবুদের কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে আপনাদের সাথে বসে কথা বললে। কারণ আপনারা ওরাসাতুল আম্বিয়া। আপনারা মিম্বরে আল্লাহর আনুগত্যের শিক্ষা দেন, রাসূলের সুন্নাতের পথ দেখান এবং দ্বীন ইসলাম কেমন বিজয়ী শক্তি ছিল সেটা তুলে ধরে উম্মাহকে জাগ্রত করেন। আলেমগণ মানুষের দ্বীনহীন অতৃপ্ত অন্তরে দ্বীনের আলো জ্বালাতে ময়দানে যেমন দাওয়াতের কাজ করেন তেমনি গভীর রাতে তাহাজ্জুদে দয়াময়ের দরবারে শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও কান্নায় আল্লাহর দয়া ভিক্ষা চান। আপনাদের সাথে বসতে পারাটাও সৌভাগ্যের।
জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান (১১ নভেম্বর, সোমবার) যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সর্বদলীয় উলামাদের সংগঠন “বাংলাদেশী উলামা-মাশায়েখ ইউকে”র আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। পূর্বলন্ডনের স্থানীয় একটি হলে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে শীর্ষ স্থানীয় উলামাগণ, বিভিন্ন মসজিদের খতিব, ইমাম, মুফতি, মুফাসসির উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন বাংলাদেশী উলামা-মাশায়েখ ইউকে’র সভাপতি মাওলানা এ কে মওদুদ হাসানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শাহ মিজানুল হক-ও মাওলানা এফ কে এম শাহজাহান এর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল ফর মস্ক এর ও ইশায়াতুল ইসলামের চেয়ারম্যান মাওলানা হাফেজ শামসুল হক, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি শাহ সদরদ্দীন, দাওয়াতুল ইসলাম ইউ কের আমীর শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা ডক্টর শুয়াইব আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।
ডা. শফিক বলেন, আপনারা সবাই বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন। আমি খুব সাধারণ একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। দ্বীনের খেদমতে আপনাদের সামনে আমি সামান্য একজন মানুষ। আমি আপনাদের কাছে দোয়া নিতে এবং আপনাদের নসিহত শুনতে এসেছি। তিনি বলেন, কওমি-আলিয়া, সুন্নি আর ওয়াহাবি বলে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরী’র করা আমাদের কাজ নয়। আমরা সবাই ভাই ভাই। ভাইয়ে- ভাইয়ে মতের পার্থক্য থাকতে পারে তবে ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে তাগুতের বিরুদ্ধে আমাদের সবার লড়াই এক। আমরা চাই আমাদের প্রিয় জন্মভূমিতে ইসলাম বিজয়ী শক্তি হোক। আমি জামায়াতে ইসলামী করি। আপনারা কেউ জমিয়ত করেন, কেউ খেলাফত করেন, কেউ অন্য ইসলামী দল করেন। কিন্তু কোনো বাতিল শক্তি যেন আমাদের মত-পার্থক্যকে পুঁজি করে তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহার করতে না পারে। আমরা এক হয়ে গেলে আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতিবীদ, উলামা মাশায়েখগণ গত ১৬ বছর যে জুলুমের শিকার হয়েছেন সেটা ছিল নজিরবিহীন। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগের বর্বরতা না হলেও সেটা ছিল শেখ হাসিনার নব্য জাহেলিয়াতের এ যুগের সংস্করণ। আমাদের কোমলমতি কিশোর-যুবকদের হাতে এমনভাবে দাম্ভিকতার পরিসমাপ্তি ঘটালো সেটা নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বড় সাহায্য। ইতিহাসের এক নতুন বিস্ময়ও বলা যেতে পারে। আল্লাহর দেয়া এই নিয়ামতকে যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।
ডা. শফিক ১৬ বছরে শেখ হাসিনা বাংলদেশের আলেম-উলামা, মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষকদেরই শুধু নির্যাতনই করেনি তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসকে চরম বিকৃত করার বড় এক মিশনে নেমেছিলেন। হেফাজতে ইসলামের উপর রাতের অন্ধকারের বর্বরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ঐ রাতে হেফাজতের ভাইগণ ক্ষমতা দখল করতে যাননি। তারা গিয়েছিলেন ইসলাম বিদ্ধেষীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঈমানের দাবিতে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু তাদের উপর ইতিহাসের ভয়ানক নিষ্ঠুর বর্বরতা চালানো হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আলেম-উলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের খুন, জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) মনে মনে করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের নিরীহ ভদ্র-নম্র আল্লাহ ওয়ালা আলেম-উলামা, কোমলমতি মাদরাসা ছাত্রদের হত্যার মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশে তার রাজত্ব চিরস্থায়ী করবেন।
জনগণের জন্য নিয়ামক শক্তি হিসেবে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো যাতে জনগণের মাঝে প্রমাণ করতে পারে সে জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া ঈমানের দাবি। মাসআলাগত বিষয় নিয়ে অনৈক্য মুমিন হিসেবে আমাদের কাজ নয়। মুমিন হিসেবে কেন আমরা কেন একে অন্যের আয়না হবো না ? দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে কেন আমাদের মধ্যে দেয়াল থাকবে ঐক্যবদ্ধ শক্তির চূড়ান্ত ফলাফল ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পলায়ন। সাধারণ জনতার পাশাপাশি ঢাকার অলি-গলিতে কওমি-আলিয়াসহ সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীরা লড়াই করেছেন। অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক শাহাদাত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
আলেম-উলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের এতো ত্যাগ ছিল একটি সুন্দর ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। এতো ত্যাগ, এতো কুরবানী, এতোগুলো মজলুম মানুষের রক্তের ঋণ পরিশোধে আসুন আমরা সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হই।
তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য ঐক্যের প্রয়োজনে আমার যত ছোট হওয়া প্রয়োজন হয় আমি সেটা জন্য রাজি। আমরা সবাই এক হতে চাই আল্লাহর জন্য।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আলেমেদ্বীন শায়খ ইসহাক আল মাদানী, অধ্যাপক মুফিজুর রহমান, মাজাহিরুল উলুম মাইল এন্ড এর প্রিন্সিপাল শায়খ ইমদাদুর রহমান মাদানী, ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী, বাংলাদেশী উলামা-মাশায়েখ এর সাবেক সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউকে’র সহ সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সহ সভাপতি মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, মসজিদে আয়েশা টটেনহামের খতীব মাওলানা খিজির হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউকে’র সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, খেলাফত মজলিস ইউকে সাউথ এর সহ সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশী উলামা মাশায়েখ ইউকে’র অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী, মাওলানা রফিক আহমদ রফিক, বাংলাদেশী উলামা মাশায়েখ ইউকে’র প্রচার সম্পাদক মাওলানা তায়ীদুল ইসলাম, দারুল উম্মাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হাসানাত চৌধুরী, খেলাফত মজলিস লন্ডন শাখার সহ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসেন প্রমুখ।