ডেঙ্গু এবার ব্যতিক্রম নভেম্বরেও বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৫৮:৩১ অপরাহ্ন
# আক্রান্ত বেশি শিশুরা
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে এই নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ‘এই নভেম্বর মাস’ শব্দগুলো যোগ করা হলো এ জন্যই যে সাধারণত এ মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। দেশে গত ২৪ বছরের অভিজ্ঞতা এমনই। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে।
আর এ বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বড় বিপদ হলো, শিশুরা ডেঙ্গুর মধ্যে অন্য রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী ১২ হাজার ২১৪টি শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে আবার ৭ হাজার ৯৮৪ জনই ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী। এ বয়সী শিশুরা সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। সে অনুযায়ী মোট আক্রান্ত শিশুর ৬৫ শতাংশের বেশি স্কুলগামী।
এখন পর্যন্ত শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪৭ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে। আবার তাদের মধ্যে ২৫ শিশুর বয়স ৬ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৫৩ শতাংশেরই বয়স ছিল ৬ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন জানান, সার্বিকভাবে মশার নিয়ন্ত্রণে জোর তৎপরতার অভাব আছে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে হচ্ছে না। স্কুলে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিশুরা যে আক্রান্ত হচ্ছে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও মার্চ মাস থেকে তা কমতে থাকে। জুন পর্যন্তও একটা সহনীয় অবস্থায় ছিল। কিন্তু জুলাই থেকে তা বাড়তে থাকে। জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে আসে। জুলাইয়ের পর থেকে দেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা আছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হচ্ছে। কিন্তু তারা যে স্কুল গিয়েই যে আক্রান্ত হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক শেখ দাউদ আদনান। তিনি বলেন, ডেঙ্গু মশা সাধারণত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশি কামড়ায়। এ সময়টায় শিশুরা স্কুলে যায় বা বিকেলের দিকে মাঠে খেলা করে। এখন এই হেমন্তকালেও গরম ভাব রয়েছে প্রকৃতিতে। তাই শিশুরা সাধারণত স্কুলে বা মাঠে যেখানেই থাকুক, সেখানে হাফশার্ট বা হাফপ্যান্ট পরে থাকে। অর্থাৎ তাদের শরীরের অনেকটাই অনাবৃত থাকে। তাই মশার কামড় খাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে ৫৯১টি শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে মারা গেছে ৭টি শিশু। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজারের বেশি। আর মারা গিয়েছিল ২৩ শিশু। গত বছর সবচেয়ে বেশি ৫৫৮টি শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছিল আগস্ট মাসে। এরপর থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমতে থাকে। তবে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ২৪৪ শিশু আক্রান্ত হয়েছে অক্টোবর মাসে। আর এ মাসের প্রথম ১০ দিনে ৮৮ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের অনেকেই আবার টাইফয়েড, জন্ডিস, নিউমোনিয়া ছাড়াও পেটের নানা অসুখে আক্রান্ত।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গুর সঙ্গে শিশুর শরীরে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধার কারণ অভিভাবকদের অসচেতনতা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই শিশুর রুচি কমে যায়। খেতে চায় না। অভিভাবকেরা অসচেতনভাবে নানা খাবার খেতে দেন। শরীর দুর্বল থাকায় অন্যান্য রোগে সহজেই আক্রান্ত হয় শিশু।
শিশু বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হক চৌধুরী বলছিলেন, এখন অনেক শিশু ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্যান্য রোগ যেমন জন্ডিস, নিউমোনিয়া ছাড়াও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে, মশাবাহিত অন্যান্য রোগের সংক্রমণসহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও নির্মূলের পথ বের করতে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সরকার সচিব, স্বাস্থ্যসচিবসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।