সম্মানিত চোর!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন
একথা অনস্বীকার্য যে, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নেতামন্ত্রীদের প্রায় সবাই এবং আমলা-কর্মচারীদের অধিকাংশই দুর্নীতিবাজ তথা জনগণের অর্থ চুরি আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন। তাদের চুরি দুর্নীতি ও অন্যান্য অপকর্ম অপরাধের নতুন নতুন খবর প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে মিডিয়ায়। এদের অনেকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। এই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের মতো ব্যক্তি। বিচারের জন্য তাদেরকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে পুলিশী প্রহরায়।
গত ১১ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানিতে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান একটি ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামীদের মতো হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা হচ্ছে। আমরা কি পালিয়ে যাবো? আমাদের অসম্মান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এখানে যারা আছি, তারা কেউ মন্ত্রী, কেউ এমপি, আইজিপি ছিলাম। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য যে, মন্ত্রী শাহজাহান খানের দলীয় সরকারের শাসনামলে বিরোধী দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে শুধু হাতকড়া নয়, পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে আনা-নেয়া করা হয়েছে।
মন্ত্রী শাহজাহান খানের ক্ষোভ মিশ্রিত বক্তব্যটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। অনেকের মন্তব্য, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের এমপি মন্ত্রীরা তার মতোই অবৈধ পন্থায় নির্বাচিত। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া তারা প্রায় সবাই রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের অর্থ চুরি বা আত্মসাতের সাথে জড়িত। আর তাদের চুরি ও লুটপাটকৃত অর্থের পরিমাণ এক কোটি দুই কোটি নয়, শত থেকে হাজার এমনকি লক্ষ কোটি টাকা। আর এই অর্থের বেশীর ভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চুরি ও আত্মসাত করেও এই অর্থ যদি দেশে থাকতো তবুও দেশ ও দেশের জনগণের উপকার হতো। এদিক দিয়ে ডাবল ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ নামক দারিদ্র্যপীড়িত দেশটির। একইভাবে মন্ত্রী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধেও হাজার হাজার কোটি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন খাতের শীর্ষ মাফিয়া হিসেবে বিগত দেড়যুগে হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির।
এসব বিষয় বিবেচনায়, এসব মন্ত্রী এমপিরা কোন সাধারণ চোর বা অর্থ তসরুফকারী নন, তাদেরকে রীতিমতো মহাচোর কিংবা মহা অর্থ আত্মসাতকারী বলাই সমীচিন। সাধারণ চোর বা পকেটচোর ধরা পড়লে মানুষ অনেক সময় গাছের সাথে কিংবা বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে পেটায়, তারপর তুলে দেয় পুলিশের হাতে। এদিক দিয়ে শাহজাহান খানের মতো মহাচোরদের শুধুই হাতকড়া পরানো হয়েছে, এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন। কলমের খোঁচায় কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা জনগণের তথা রাষ্ট্রের শত শত কিংবা হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন, তাদেরকে ঐ সাধারণ চোর ছ্যাঁচড়দের চেয়ে অনেক বেশী অপমান ও শাস্তি প্রদান করা উচিত। শাস্তি যদি দৃষ্টান্তমূলক, শিক্ষনীয় এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক হতে হয়, তবে চোর ও দুর্নীতিবাজদের একজন সাধারণ নিরপরাধ মানুষের মতো সম্মান, মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পেতে পারে না।
সচেতন মহল মনে করেন, চোর সে যতো উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ও ক্ষমতার অধিকারী হোক, তার সাথে সাধারণ মানুষের ন্যায় সমান সম্মানজনক আচরণ করা উচিত নয়, যদিও সে মানবিক আচরণ লাভের অধিকারী। জেলে যতো সুযোগ সুবিধা দেয়া হোক একজন অপরাধী বন্দীর এতে মর্যাদা বা সম্মান সামান্যও বাড়ে না। চোর সব সময়ই চোরই, অপরাধী সব সময় অপরাধীই। জনগণের বা দেশের অর্থ চুরি বা আত্মসাতের সাথে জড়িত কেউ মন্ত্রী এমপি এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি চোর ও আত্মসাতকারীই, তিনি কখনো সম্মানিত বা মাননীয় চোর হিসেবে গণ্য হবেন না আইনের দৃষ্টিতে।