সেনাসদরের প্রেস ব্রিফিং : ৬ সহস্রাধিক অস্ত্র উদ্ধার, সংশ্লিষ্ট আড়াই সহস্রাধিক গ্রেপ্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৫৮:০৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর (৫ আগস্টের পর) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী ছয় হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় দুই লাখ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। অস্ত্র-গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন।বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, এই প্রেস ব্রিফিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা। এই মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিরাজমান অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান সেনা কর্মকর্তা ইন্তেখাব হায়দার খান। সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। কারণ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকার নির্ধারণ করবে সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে।
অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দেশের শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা রোধে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ছয়শ’র অধিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। কারখানাগুলোকে চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৮৯টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে প্রায় সব কটিই এই মুহূর্তে চালু রয়েছে। পাশাপাশি সাতশ’র বেশি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনী, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস-সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৩৮৮টি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও বহু মানুষের জানমালের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার কার্যক্রমে সেনাবাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের বেশি মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয় বলে উল্লেখ করেন ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, এই বিশেষ ক্ষমতার কার্যকর প্রয়োগের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি-যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শিল্পাঞ্চলের বিশৃঙ্খলা, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ চলাকালে উভয় দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও ভেন্যুর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে, সে জন্য দেশব্যাপী নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, এ সময় সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩৩টি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ১০ হাজারের বেশি অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোনো উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা ছাড়াই পূজা উৎসব সম্পন্ন হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, সেনাবাহিনী তাঁদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বলে উল্লেখ করেন সেনা কর্মকর্তা ইন্তেখাব হায়দার খান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। এটার ব্যাপারে তাঁদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী যেন বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হতে না দেয়।