হোয়াইট হাউসে পুনরায় স্বাগত ট্রাম্প, ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৭:২০:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: হোয়াইট হাউসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেনের কাছে পরাস্ত হয়েই হোয়াইট হাউস ছাড়তে হয়েছিল ট্রাম্পকে। এবার বাইডেনের ডেপুটি কমলা হ্যারিসকে পরাস্ত করে ১৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ফের আমেরিকার ‘সাদা বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করতে চলেছেন ট্রাম্প। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন তিনি। তার দু’মাস আগেই বুধবার হোয়াইট হাউসে পা রাখলেন হবু প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে জয়ের পর এই প্রথম হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলেন হবু প্রেসিডেন্ট।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে উভয়ের। হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘পুনরায় স্বাগত’।
ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া মসৃণভাবে হবে বলে হবু প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। এবারের নির্বাচনেও প্রথমে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ছিলেন বাইডেনই। তবে তাঁর বয়সের কারণে ডেমোক্র্যাটিক দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে। এমন অবস্থায় মধ্যবর্তী পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বছর একাশির বাইডেন। বাইডেনের পরিবর্তে কমল হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ট্রাম্পের বিপরীতে। কিন্তু পরাজিত হন রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে। নিয়ম অনুযায়ী আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের শপথ নিতে এখনও দু’মাস বাকি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে।
পরাজয়ের পর থেকে ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের কেউ কেউ তাঁকে স্বল্পকালের জন্য প্রেসিডেন্ট করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। বাইডেন-কমলার ঘনিষ্ঠ একাংশ চাইছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে আগামী দেড় মাস কমলাকে প্রেসিডেন্ট পদে বসান। যদিও বাইডেন বা কমলা কেউই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। অপরদিকে ট্রাম্পও নিজের আগামী প্রশাসনের জন্য সবকিছু সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। কারা থাকবেন ট্রাম্পের প্রশাসনে, তা নিয়ে বিস্তর চর্চাও শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে টেসলা কর্তা ইলন মাস্কের নামও উঠে এসেছে। সম্প্রতি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদমির জেলেনস্কি। আমেরিকার একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই ফোনালাপের একটি পর্যায়ে ইলনের সঙ্গেও কথা হয়েছে জেলেনস্কির।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জেতার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন দায়িত্ব কেমন হবে, সে অবয়ব ফুটে উঠতে শুরু করেছে। নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সময়ের মধ্যে ১২ জন নতুন কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করেছেন। তাঁরা হোয়াইট হাউস ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন। ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রাম্প যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে বোঝা যায়, আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তাঁর থাকবে বিশেষ মনোযোগ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের শুরুটা ছিল খানিকটা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই এখন নিজের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের ভিত রচনায় তিনি কাজ করছেন। এ জন্য আরও বেশি স্পষ্ট পরিকল্পনা ও জনশক্তি নিয়ে এগোচ্ছেন।
তাঁর কর্মপরিকল্পনা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তৎপরতা সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে: ট্রাম্প এমন কয়েকজন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাখ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী বের করে দেওয়ার তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কোনো বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা নয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাছাই করা কর্মকর্তাদের একজন স্টিফেন মিলার। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ট উপদেষ্টা ও বক্তৃতা লেখক। এখন ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের নীতিবিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গণহারে অভিবাসী বিতাড়নে তিনি যেকোনো পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে, যা থেকে বাদ পড়বে না অনিবন্ধিত ও বৈধ অভিবাসী কোনো পক্ষ। ট্রাম্পের প্রথম দফায় অভিবাসী বিষয়ে তাঁর প্রশাসনের গৃহীত কিছু কঠোর নীতিতে মিলার যুক্ত ছিলেন।
নতুন কর্মকর্তাদের আরেকজন থমাস হোম্যান। প্রথম দফার ট্রাম্প প্রশাসনে তিনি ছিলেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আটক অনিবন্ধিত পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার ট্রাম্পের নীতিকে তিনি সমর্থন করেছিলেন। এবার বৃহত্তর দায়িত্ব ট্রাম্পের ‘ইমিগ্রেশন জার’ হয়ে ফিরলেন তিনি।
গত জুলাইয়ে রক্ষণশীলদের (ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি) এক সম্মেলনে হোম্যান বলেছিলেন, ‘এ দেশে আমি সবচেয়ে বড় অভিবাসী উচ্ছেদ বাহিনী পরিচালনা করব, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’