সিলেট সীমান্ত দিয়ে ওবায়দুল কাদেরের পলায়ন নিয়ে তোলপাড়!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২:৪৯ অপরাহ্ন
বিষয়টি বিস্ময়কর-উদ্বেগজনক : জামায়াত * ব্যাপারটি উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ নেই : বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার : ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা নিরাপদে ভারতে পালিয়ে গেলেও জনরোষে পড়েন সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর অনেকেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
এবার খবরে এসেছে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে এর সত্যতা এখনো মিলেনি। তবে এ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে তোলপাড়। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা চালানোর অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড ওবায়দুল কাদেরের সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পলায়ন নিয়ে সর্বত্র চলছে কানাঘুষা। স্থানীয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট ও প্রশাসনিক সহযোগিতা ছাড়া এমন দাগী আসামীর পালিয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বিজিবি সিলেটের কর্মকর্তাবৃন্দ। তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিলেট মহানগর জামায়াত। বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেনা সিলেট মহানগর বিএনপি। প্রশাসনে বসে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসরদের মাধ্যমে দাগী সন্ত্রাসীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
জানা গেছে, এর আগে ভারতে পালাতে গিয়ে সিলেট সীমান্তে জনতার হাতে আটক হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পালাতে গিয়ে নিহত হন সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পান্না।এছাড়া সিলেট সীমান্ত দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনানসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন শহরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা মিলেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্যমতে পতনের ৩ মাস পর চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে ওবায়দুল কাদের ভারতের মেঘালয়েই আছেন বলে জানা গেছে।কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও ৩ মাসের বেশি সময় দেশের নানা জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে ওবায়দুল কাদেরকে।
এদিকে, এ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাদেরকে আটকের অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হত্যা মামলাসহ প্রায় ২ শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। ওবায়দুল কাদেরকে আটকের চেষ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু কাদেরকে আটকের অভিযান ব্যর্থ হয়।চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর ভাইকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আটক হয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ। এরপর আত্মগোপনে চলে যায় দলটির সকল কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা বেশিরভাগই ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। খুবই অল্পসংখ্যক নেতা দেশে রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা দেশ ছেড়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত সতর্ক অবস্থানে থাকলেও কিভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলছে আওয়ামী লীগ নেতাদের তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে মুখরোচক নানা গল্পও শোনা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।
মূলত বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সীমান্ত অবস্থানরত কতিপয় বিএনপি নেতা, আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট একজন বিতর্কিত আলেম ও কতিপয় দালালের সমন্বিত সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। কিছু নেতার পালিয়ে যাওয়ার এসব খবরে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরাও।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা পরিচালনাকারী মুলহোতারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারে কার্যত শক্তিশালী উদ্যোগ না নেয়ায় তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই বিস্ময়কর। এ ব্যাপারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের জুলাই গণহত্যার অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড এবং খুনী হাসিনার প্রধান দোসর। কয়েকদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনার খবর শুনে আসছি। এরমধ্যে তার সিলেট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরটি গ্রেফতার এড়ানোর কৌশলও হতে পারে। প্রশাসনের উচিত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওবায়দুল কাদেরসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবস্থান শনাক্ত করা। অবিলম্বে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট সীমান্ত দিয়ে ওবায়দুল কাদেরের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায়না। কারণ ইতোমধ্যে এই সীমান্ত দিয়ে অনেকেই পালিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত পাচারের সাথে জড়িত কোন সংস্থার কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি এমনকি চোরাচালানের সাথে জড়িতদেরও গ্রেফতার করা হয়নি। ফলে ফ্যাসিবাদের দোসররা সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর রাস্তা বন্ধ হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জবাবদিহীর আওতায় নিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী থানা এলাকার পুলিশদেরকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে দেশছেড়ে পালিয়ে যেতে সাহায্যকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসলে সীমান্তে আদম পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে বিজিবি সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক (অপরারেশন) মেজর গাজী মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে জানান, এ বিষয়ে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। আমিও মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ওবায়দুল কাদের সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টির কোন সত্যতা আমাদের কাছে নেই।
তিনি বলেন, বিজিবি হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক ও তৎপর রয়েছে। প্রতিদিনই সীমান্তে পণ্যসহ পাচারকালে মানুষও আটক হচ্ছেন। এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।