চালু হচ্ছে বন্ধ চিনিকল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০২:৫৫ অপরাহ্ন
বিগত হাসিনা সরকারকে দেশে শিল্পকারখানা স্থাপনে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং যেসব কলকারখানা চালু ছিলো সেগুলোও একে একে বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো। এর পেছনে ছিলো প্রভুরাষ্ট্র ভারতকে সুবিধা দেয়া, সুবিধা দেয়া তাদের কিছু ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থের ভাগাভাগিতে। দেশের শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেশে ভারতীয় পণ্যের বাজার উন্মুক্ত করার পেছনে স্বার্থটি হচ্ছে, ভারত অবৈধ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে এবং আগামীতেও রাখবে। হাসিনার জাতির সাথে এমন বেঈমানী ও দেশদ্রোহী কর্মের তালিকা বেশ দীর্ঘ, সবই এখন প্রকাশিত হচ্ছে। আদানির সাথে অসম ও আর্থিক দিয়ে চরম ক্ষতিকর বিদ্যুৎ চুক্তি ছাড়াও আরো বহু চুক্তি করেছে এই স্বৈরশাসক। ভারতীয় চিনির বাজার উন্মুক্ত করতে এবং ব্যবসায়ী এস আলমকে সুবিধা দিতে এই স্বৈরাচারী সরকার দেশের ৯টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনি কল বন্ধ করে দেয়।
হাসিনার শ্যেনদৃষ্টি ও চরম মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ সত্বেও এসব বিষয় প্রকাশ করেছে অনেক মিডিয়া। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর একটি অনলাইন পত্রিকা ‘চিনিকল বন্ধ কাদের স্বার্থে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশের কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্পগুলো ক্রমাগত বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। রাষ্ট্রীয় পাটকলের মৃত্যু ঘোষণার পর পরই এবার আঘাত এলো চিনিকলের উপর। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে ফেলার পর সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো বন্ধের। যে লোকসানের জন্য চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিরা দায়ী নয়, সেই লোকসানের দায় শ্রমিকের ওপর চাপিয়ে লোকসানের বোঝা কমাতে প্রাথমিকভাবে ৬টি চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)। এ বছর থেকে যেসব চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর, রংপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল। বন্ধ হওয়া চিনিকলে ২ হাজার ৮শ ৮৪ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত।
লক্ষণীয় যে, উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ব ৯টি চিনিকল। আজ ১৫ নভেম্বর আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনে যাবে নর্থ বেঙ্গল চিনিকল লিমিটেড। পর্যায়ক্রমে বাকী ৮টি চিনিকল উৎপাদন শুরু করবে। গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয় এক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে চিনিকলগুলো চালুর তারিখ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অধীনে মোট ১৫টি সরকারী চিনিকল রয়েছে।
উল্লেখ্য, উন্নত দেশ মানেই শিল্পোন্নত দেশ। বিশ্বে যেসব দেশ উন্নতির চরম শিখরে ওঠেছে, তারা শিল্পায়নের পথ ধরেই উন্নত হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইন্সটিটিউট কর্তৃক ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে ‘নোট কান্ট্রি হ্যাজ বিকাম অ্য মেজর ইকোনমি উইদাউট বিকামিং অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পাওয়ার’। বিগত স্বৈরাচারী হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ দেড় দশক ধরে উন্নয়নের হাজারো বুলি কপচালেও দেশকে শিল্পায়িত করতে কোন পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং চালু শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে পর্যায়ক্রমে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনরায় এসব কলকারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করা যায়, এই শুভ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দেশের শিল্পখাতকে ধ্বংসের প্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনে দৃঢ় ভিত্তির উপর পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে।