গুণীজনকে সম্মাননা জানানোর মাধ্যমে কেমুসাস সম্মানিত হয়েছে : ড. আবদুর রব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৬:২৫:১৪ অপরাহ্ন
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেছেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ কেবল সিলেটে নয়, সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় আট দশকেরও বেশি সময় ধরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান শত শত গবেষক, লেখক ও কবি সৃষ্টি করেছে, যারা তাদের প্রতিভা দিয়ে দেশ তথা বিশ^কে আলোকিত করছেন। এ প্রতিষ্ঠান যেমন আলোকিত মানুষ তৈরি করছে, তেমনই গুণীজনদেরকে সম্মাননা জানাচ্ছে। এ সম্মাননা জানানোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কেমুসাসই সম্মানিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট-এর উদ্যোগে কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরীকে নিবেদিত সাহিত্য সম্মেলন ২০২৪ ও দশম-পঞ্চদশ কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব আরো বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাথে আমার সম্পৃক্ততা প্রায় ষাট বছর ধরে। আমি খুব ছোটবেলায় স্কুলে অধ্যয়নকালীন আমার ছোট ভাই ডা. আবদুল হাই মিনারের সাথে কেমুসাসে এসেছি। তখন আমি এ প্রতিষ্ঠানের আজীবন সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হকের সংস্পর্শ ও স্নেহ -ভালোবাসা পেয়েছি। আজকে যাদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই সাহিত্যাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট-এর সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর’র সভাপতিত্বে শনিবার সন্ধ্যায় সংসদের শহিদ সোলেমান হলে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আল ইসলাহ সম্পাদক আহমদ মাহবুব ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দশম-পঞ্চদশ সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন যথাক্রমে কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী (২০১৯), গবেষক আবদুল হামিদ মানিক (২০২০), কবি আমেনা আফতাব (২০২১), কবি মুকুল চৌধুরী (২০২২), মীর লিয়াকত আলী (২০২৩) এবং স্থপতি শাকুর মজিদ (২০২৪)।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি ও সম্মেলন বাস্তবায়ন উপকমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ এবং সাহিত্য সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ ‘সিলেটের সাহিত্য আন্দোলন’ উপস্থাপন করেন কবি এডভোকেট কামাল তৈয়ব। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কেমুসাসের সহসভাপতি সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, সহসভাপতি গবেষক প্রফেসর নন্দলাল শর্মা, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সেলিম আউয়াল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী ও কবি আফজাল চৌধুরীর পুত্র মুহাম্মদ জুলকারনাইন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কেমুসাসের জীবন সদস্য ক্বারী আব্দুল বাছিত। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজনদের পরিচিতি উপস্থাপন করেন মোয়াজ আফসার, ছয়ফুল করিম চৌধুরী হায়াত, ইশরাক জাহান জেলী, কামরুল আলম, ফায়যুর রাহমান, জাহেদুর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির সংবর্ধিত অতিথিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ অর্থ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সাহিত্য সম্মেলন স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ আমার নিজের প্রতিষ্ঠান। আমি দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে সংসদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পাওয়ায় আমি মনে করি আমার কর্মফল সার্থক হয়েছে। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গবেষক আবদুল হামিদ মানিক বলেন, আমি কেমুসাসের দুইবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়ে আমি আপ্লুত।
কবি মুকুল চৌধুরী বলেন, ষাটের দশক থেকে কেমুসাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এ সম্পৃক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেমুসাসকে নিজের প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। কেমুসাস পুরস্কার প্রদান করায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কবি আমেনা আফতাব বলেন, কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার আমার জীবনে ৪০তম পদক। নিজের ঘর থেকে পুরস্কার পেয়ে আমি আপ্লুত, বাকরুদ্ধ। একজন নারী হিসেবে সাহিত্যাঙ্গনে টিকে থাকতে আমাকে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সম্পর্ক, সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাহিত্যিক মীর লিয়াকত আলী বলেন, আমি কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হকের কাছ থেকেই সাহিত্যের প্রেম শিখেছি। এ প্রেম আমাকে কেমুসাস গুণীজন সম্মাননাপ্রাপ্তদের একজন হিসেবে সম্মানিত করেছে। এর চেয়ে বড় পাওনা আমার জীবনে আর হতে পারে না।
স্থপতি শাকুর মজিদ বলেন, আমার সাহিত্য জীবনে সূচনা থেকেই কেমুসাসের সাথে পরিচিত। আল ইসলাহ’র কয়েকটি সংখ্যায় আমি লিখেছি। মানুষের জীবন একটি ভ্রমণ। সাহিত্যের বিভিন্ন ভাষায় মানুষ একে রচনা করেন। আমি জীবনে ভ্রমণকাহিনীই রচনা করেছি। সাহিত্য সাধনার কারণে কেমুসাস যে সম্মান জানিয়েছে, এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
সভাপতির বক্তব্যে কেমুসাসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূর বলেন, আজকে যে ছয়জন গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই তাঁদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গঠনে কাজ করছেন। তাদেরকে সম্মাননা জানানোর মাধ্যমে কেমুসাস এবং আমরাও সম্মানিত হয়েছি। বিজ্ঞপ্তি