জকিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডে গ্যাস ফ্লোয়িং টেস্ট : ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহের দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৫৩:১১ অপরাহ্ন
এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ :
দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র জকিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডে ৩দিন যাবৎ গ্যাসের ফ্লোয়িং টেস্ট চলছে। গত শনিবার থেকে শুরু হয়ে গ্যাস টেস্টিং কার্যক্রম আজ শেষ হবে। বর্তমানে ১৭৫০ পিএসআই ওয়েলহেড প্রেসারে দৈনিক ১০-১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে বাপেক্সের কারিগরি টিম টেস্টিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে গ্যাস ফ্লো আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার কর্মকর্তারা। ২০২১ সালে কূপটি খনন করা হয়। তখন অতিরিক্ত প্রেসার পরিলক্ষিত হওয়ায় প্লাগ করে রাখা হয়। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বাপেক্সের বিজয়-১২ রিগের মাধ্যমে ওয়ার্কওবার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। কূপটির ২৮৭২-২৮৮৪ মিটার গভীরতায় পারফোরেশন সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে, জকিগঞ্জে গ্যাস সরবরাহের দাবী দিনদিন প্রবল হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী, সবগুলো কূপ অনুসন্ধান করে গ্যাস উত্তোলন করে জকিগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দিয়ে পরে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা। এলাকাবাসী মনে করেন যেখান থেকে আয় হয়, সেখানেই ব্যয় করা উচিৎ। জকিগঞ্জবাসীকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য হলে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, ইতিমধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা করে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে গ্যাসকূপ ১ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে জকিগঞ্জে অনুসন্ধান চালালে আরও ২/৩টি কূপ নিশ্চিত পাওয়া যাবে। এখানে গ্যাসের প্রচুর মজুত রয়েছে। প্রতিদিন গ্যাস টেস্টিং কার্যক্রম দেখতে গ্যাসফিল্ড এলাকায় প্রচুর মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
উল্লেখ্য, জকিগঞ্জ পৌরসভার আনন্দপুর গ্রামে ২০২১ সালে রূপকল্প-২ খনন প্রকল্পের প্রথম গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। ওই বছর ১৫ জুন ড্রিল স্ট্রিম টেস্ট পরিচালনা করে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের মজুদ ঘোষণা করে এবং অনুসন্ধান কূপটিকে ২৮ তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই এবং ফ্লোটিং চাপ ১৩ হাজারের অধিক। ৪টি স্তরে ৬৮ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কূপটি থেকে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে আশা বাপেক্সের। নতুন এই ফিল্ডটি থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিয়ানীবাজার ও ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ।
বাপেক্স গ্যাস ফিল্ড আবিস্কার করলেও জনগণের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। সিলেট অঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) কাছে বিক্রি করতে হবে।
জেজিটিডিএসএল সুত্রে জানা যায়, পাইপ লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত চেয়ে কয়েকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জকিগঞ্জ থেকে গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পরিকল্পনা রয়েছে। অনুমোদন পেলে ১৮ মাস সময় লাগবে পাইপ লাইন স্থাপনে। পাইপ সরবরাহকারি কোম্পানি ১ বছরের মতো সময় নেবে। আর স্থাপনে ৬ মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। বড় কোনো নদী নেই সে কারণে এতে জটিলতা কম রয়েছে।
বাংলাদেশে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদ ধরা হয় ২০.৫৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট), সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে আরো প্রায় ৮ টিসিএফ মজুদ ধারণা করা হয়। এ যাবত প্রায় ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে সে হিসেবে আর মাত্র ৮ বছরের গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে। গত ৯ অক্টোবর দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপ থেকে ৭৮৩.৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর আইওসির ৪৩টি কূপ থেকে ১৩০৬.৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। ওই দিন আমদানি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ৭৬১.২ মিলিয়ন ঘনফুট।