আশা-নিরাশায় দুলছে ‘নির্বাচনী ট্রেন’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩:৫৩ অপরাহ্ন
আশাহত বিএনপি, আশায় জামায়াত
জালালাবাদ রিপোর্ট : রক্তঝরা এক ছাত্র-গণঅভূত্থানের মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে নতুন বাংলাদেশ। গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারেরও শত দিন পার হয়েছে। শত দিন পরে এসে সরকার জানালো ‘নির্বাচনী ট্রেনের’ যাত্রা শুরু হয়েছে। এরপর থেকে আলোচনা আরো জোরদার হয়েছে-কবে হবে-নির্বাচন? এ নিয়ে আশা-নিরাশায় রাজনৈতিক দলগুলো।
কয়েকদিন আগে বিষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও তরুণ উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য গণঅভ্যূত্থান হয়নি। এরপর গত রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে নির্বাচন নিয়ে কোন স্পষ্ট ঘোষণা দেননি। এতে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি। আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐকমত্যের মাধ্যমে।
তবে সেই ভাষণে তিনি নির্দিষ্ট করে নির্বাচনের দিনক্ষণের কোন ইংগিত দেননি। আর এতে বেশি হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
ওইদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ১০০ দিনের পূর্তিতে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন। দ্রুত নির্বাচন হলে দেশের মঙ্গল হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার যতদিন থাকবে, সমস্যা ততো বাড়বে।
এরমাঝে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। সেখানেও তিনি সরকারের মেয়াদ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেন নি। তবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু একটি গণমাধ্যমে বলেন, কোন দিনে, কোন মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-দেশবাসী স্পষ্ট করে জানতে চায়। দিন-মাস-সময় ব্যতিরেকে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) অন্য সব কথাই বলেছেন। যেটা প্রয়োজনীয়, সেই কথাটাই জানা হলো না। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু কবে হবে, সেই বিষয়টা খোলাসা করেননি। সেটা খোলাসা করলে ভালো হতো।
তবে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে আশাহত নয় জামায়াতে ইসলামী। তবে নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট একটি ঘোষণা চায় বৃহৎ এই ইসলামী দল।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারপ্রধানের বক্তব্যে আমরা আশাহত নই। তবে তাঁর বক্তব্যকে আরও স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ করব। আমাদের কথা হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ যত দ্রুত সম্ভব জনগণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার। আমরা মনে করি, সবকিছু সংস্কার করা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। জরুরি সংস্কার, যেমন-নির্বাচন কমিশন সংস্কার, বিচার বিভাগের সংস্কার, সংবিধানের কিছু বিষয়ে সংস্কার করেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাঁদের বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।
ওদিকে, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এই ট্রেনের শেষ স্টেশন সম্পর্কে জনগণ ও রাজনীতিবিদদের ধারণা দিতে পারলে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা আছে, তা অনেকখানি কেটে যেত। নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ না করায় অস্পষ্টতার জায়গাটা রয়েই গেল। এটা নিয়ে জনগণ এবং রাজনৈতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থেকে যাচ্ছে।
বিএনপি যখন আশা ভঙ্গের বেদনায় পুড়ছে তখনই গতকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে।
একজন সাংবাদিক আইন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?
এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই।
এ বিষয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।