রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলায় পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৩৬:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে পাওয়া অনুমতির ফায়দা নিয়ে রুশ ভূখন্ডে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এই হামলায় বেড়েছে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা। মঙ্গলবার এই হামলার বিষয়টি উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক প্রদেশের এক সামরিক ঘাঁটিতে ছয়টি মিসাইল ছোঁড়ে ইউক্রেন। তবে এর মধ্যে ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে থাকা অবস্থায় ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো। তারা জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের ভাঙা অংশ ঘাঁটিতে আঘাত করলে সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে দ্রুত আগুন নেভানো হয়েছে। এই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বা কেউ হতাহতও হননি।
অপরদিকে ইউক্রেনের দাবি, তারা রাশিয়ার প্রায় ১১০ কিমি অভ্যন্তরে অবস্থিত অস্ত্রাগারে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কোন অস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা হয়েছে তা না জানালেও ইউক্রেন সরকারের এক সূত্র ও এক মার্কিন কর্মকর্তা এটিএসিএমএস ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে দুইটি প্রতিহত করতে পেরেছে। তার ভাষ্য, গোলাবারুদের সংরক্ষাণাগারে এই হামলা চালানো হয়।
বাইডেন এ সপ্তাহেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এটিএসিএমএসই ইউক্রেনকে দেওয়া সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, পশ্চিম এই যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে চায়, যার স্পষ্ট ইঙ্গিত এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমতি। মস্কো বলছে, এ ধরনের অস্ত্র সরাসরি মার্কিন সমর্থন ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভন নয়। যার ফলে, এর ব্যবহারে ওয়াশিংটনও এখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। রাশিয়ার জন্য পাল্টা জবাব দেওয়া এখন দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সহস্রতম দিনে এলো এই হামলা।
এমন সময় এই হামলা হলো, যখন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পশ্চিমের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া অব্যাহত থাকা বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি তারা ৪২টি ইউক্রেনীয় ড্রোনও ধ্বংস করেছে। রাত ৯টা থেকে ১১টা বেজে ৫৫ মিনিটের মধ্যে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত আট এলাকায় এই ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়। ৩২টি ড্রোন ধ্বংস হয় শুধু ব্রিয়ানস্ক এলাকাতেই।
রাশিয়ার নতুন পরমাণু অস্ত্র নীতিমালা :
চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি সংশোধিত পরমাণু নীতিমালায় সাক্ষর করেছেন। এই নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো রাষ্ট্র প্রথাগত হামলা চালায়, যাদেরকে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন অপর কোনো রাষ্ট্র সমর্থন করছে, তাহলে এই হামলাকে ওই দুই রাষ্ট্রের সম্মিলিত হামলা হিসাবে বিবেচনা করা হবে এবং পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলার জবাব দেওয়া যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় এই সংশোধিত নীতি জারি করা হয়েছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পুতিন এই নীতিমালা হালনাগাদ করতে চেয়েছেন।
এই নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যালিসটিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও অন্যান্য উড়ুক্কু যানের মাধ্যমে বড় আকারে আকাশপথে হামলা এলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে জবাব দেওয়া যাবে। এতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বা সমর্থন’ নিয়ে কোনো পরমাণু শক্তিবিহীন রাষ্ট্র হামলা চালালে এটাকে ‘রুশ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত হামলা’ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। তবে এ ধরনের হামলার জবাবে নিশ্চিতভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কী না, তা নির্দিষ্ট করা না হলেও, সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেনে দূতাবাস বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র :
রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার বিমান হামলা হতে পারে বলে তথ্য পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে দূতাবাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিল ওয়াশিংটন। রাশিয়ার ভূখন্ডে হামলা চালানো হলে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে দেশটি। তাই গতকালের এ হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া :
পারমাণবিক বোমা হামলাজনিত শকওয়েভ ও তেজস্ক্রিয়তাসহ নানা ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষায় ভ্রাম্যমাণ বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘কেইউবি-এম’ নামের এসব আশ্রয়কেন্দ্র পারমাণবিক বোমা হামলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দিতে পারে।
যেসব পরিস্থিতি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সুরক্ষা দিতে পারে, সেগুলো হলো-বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবন থেকে নেমে আসা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকা-ের প্রভাব।