বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি: ড. ইউনূস
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন
সেনাকুঞ্জে এক যুগ পর খালেদা জিয়া, উপস্থিত ছিলেন ডা: শফিক
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে বৃহৎ আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে সশস্ত্রবাহিনী দিবস। সেই আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াত আমীর ডা: শফিকুর রহমানসহ উপদেষ্টা, দেশের খ্যতনামা রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিতিতে এক মিলনমেলার সৃষ্টি হয়। যা গতকাল ছিলো অনেকটা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের যে স্বপ্ন নিয়ে রাষ্ট্রকে স্বাধীন করেছিলেন, আমি তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা এখন থেকে বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণই হবেন সব ক্ষমতার মালিক। দেশ পুনর্গঠনের’ একটি ‘নতুন সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করে তিনি।
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারও ওপরে না, আবার কেউ কারও নিচেও না; এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সব বীর শহিদকে এবং মহান আল্লাহর দরবারে আমি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমি সব শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য এবং সম্মানিত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের এই আয়োজনে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে যেসব খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের জন্যও রইল আমার বিনীত শ্রদ্ধা।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই।
শুরুতেই তিনি খালেদা জিয়াকে স্বাগত এবং অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। ড. ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে, আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) এই সুযোগ দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এসময় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপ্রিয় এক দেশ। প্রতিবেশীসহ সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল সহযোগিতার মাধ্যমে সহাবস্থানই আমাদের মূল লক্ষ্য। তথাপি যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া :
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তাঁর আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণপত্র জানানো হয়।
বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেনাকুঞ্জে জামায়াত আমীর:
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে জামায়াতের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।