ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ : সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৪২:২০ অপরাহ্ন
৬১.০১% চান ১ বছরের মধ্যে নির্বাচন *৬৫.০৯% চান সব সংস্কার শেষে নির্বাচন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।
১৮ দশমিক ৭ শতাংশ চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ। ভয়েস অব আমেরিকার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে এক জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকেরা, এসব বিষয়ে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার সম্পাদকীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিসটেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং-এর মাধ্যমে দেশের ৮টি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী ১ হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপটি করা হয়, দৈবচয়ন ডিজিটাল ডায়ালিং পদ্ধতিতে। বাংলাদেশের মুঠোফোন নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সব ধরনের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের নিজস্ব ডেটাবেজ থেকে জরিপটির নমুনা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত অফিশিয়াল টেলিফোন প্ল্যান থেকে এ নমুনা নেওয়া হয়। একটি আর-বেজড প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সিম্পল র্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ের (এসআরএস) মাধ্যমে জরিপটির নমুনা বাছাই করা হয়েছে।
জরিপ পরিচালনার কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ঢাকা অফিসের কলসেন্টার থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করা হয়। ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, জরিপটিতে মার্জিন অব এরর ৩ দশমিক ১ শতাংশ। জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় এক মাস আগে যেহেতু তাঁদের মতামত জানিয়েছেন, তাই এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।
এই জরিপের ফলাফল নিয়ে আগামী কয়েক দিন কয়েক পর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকা। গতকাল শনিবার ছিলো এর প্রথম পর্ব।
৬১ দশমিক ১ শতাংশ চায় ১ বছরের মধ্যে নির্বাচন :
জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ চান এক বছরের মধ্যে নির্বাচন। এরমাঝে রয়েছেন শহরের জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসরতদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক ২ ও ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।
১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ১০ দশমিক ৩, গ্রামের ৮, পুরুষদের ১২, নারীদের ৫ দশমিক ২, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৮ দশমিক ৬ এবং ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন, শহরের ৬ দশমিক ২, গ্রামের ৫ দশমিক ৭, পুরুষদের ৬ দশমিক ৯, নারীদের ৪ দশমিক ৮, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৭ দশমিক ৬; ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের ৪ শতাংশ মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে বৃহৎ ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তাদের বক্তব্য, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করার পরই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজগুলো শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন হলে আবার নতুন করে তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদের’ আবির্ভাব ঘটবে। তারা বলছে, কেবল একটি নির্বাচন করার জন্য ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়নি।
ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জনমত জরিপে তাই সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ এই দুটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ :
‘আপনি কি মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে সব সংস্কার করার পর নাকি শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কার করার পর নির্বাচন আয়োজন করা উচিত-এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বেশির ভাগ
মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) মনে করেন, সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না এবং দশমিক ৫ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে, সেসব সংস্কার শেষ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত বলে যারা মনে করেন তাঁদের বেশির ভাগই বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ, ও নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত সংস্কারগুলো করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। পুলিশ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ, বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক খাতে সংস্কারের পক্ষে ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার চান ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা।