এড. সাইফুল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় মিলেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৫৬:৩৪ অপরাহ্ন
জালালালাবাদ ডেস্ক : ২৬ নভেম্বর, বিকেল সোয়া তিনটা। ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানাধীন এসি দত্ত লেনের নিলয় স্বজন ভবন। মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক যুবক। তাকে ঘিরে ধরে ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক। তাদের মধ্যে একজনের পরনে কমলা রঙের গেঞ্জি, কালো প্যান্ট, মাথায় ছাই রঙের হেলমেট। রাস্তায় পড়ে থাকা ওই ব্যক্তিকে কিরিচ দিয়ে কোপাতে থাকেন এই হেলমেটধারী। লাল হেলমেট, ব্লু রঙের টি-শার্ট ও জিন্স পরা বটি হাতে আরেক যুবক ওই যুবককে কোপাচ্ছেন। অন্য আরও তিন-চারজন তাকে পেটাচ্ছেন। এটি পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের অদূরে কোতোয়ালি থানা-সংলগ্ন সেবক কলোনির স্বজন ভবনের সামনের রাস্তায় এভাবে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। তার নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন অন্যরা। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মনু মেথর ও রাজীব ভট্টাচার্যকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন রয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
নগর পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা এডিসি কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, ‘শুধু চন্দন দাস নন, হত্যাকাণ্ডে ২৫ থেকে ৩০ জন অংশ নেয়। প্রাথমিকভাবে ভিডিও ফুটেজ ও গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কিলিং মিশনে অংশ গ্রহণকারী যুবকদের বেশির ভাগকেই পুলিশ শনাক্ত করেছে। হত্যায় অংশ নেওয়া আটজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
চন্দন দাস ছাড়াও সাইফুল হত্যায় অংশ নেওয়া বাকি ২৪ জন হলেন- বিশাল, বিকাশ, শুভ কান্তি দাস, বিধান, রনব, রাজ কাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগ লাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, ওমকার দাশ, দেবী চরণ, দেব, জয়, রমিত, বুঞ্জা, লালা ও রুবেল সাহা।
এদিকে সাইফুল হত্যাকাণ্ডের চারদিনের মাথায়ও মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানায় আজ শুক্রবার বিকেলে যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম। তবে সিএমপির আরেকটি সূত্র বলছে, মামলা দায়ের করতে পুলিশ নিহত আইনজীবী সাইফুলের পরিবারের অপেক্ষায় আছে।
নগর পুলিশের এডিসি (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সাইফুল হত্যার ঘটনা এবং পুলিশের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনজীবী আলিফের পিঠে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের পাঁচটি গভীর ক্ষত রয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় আঘাতের ক্ষত রয়েছে অন্তত ৩০টি। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের তিনটি গভীর ক্ষত আছে। তার ডান কানের একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল এলাকার মৃত সুনিল ধরের ছেলে বাবলা ধর (৪২) এবং আশিয়া হিন্দুপাড়া এলাকার দুলাল শীলের ছেলে সজল শীল (৪০)। এর আগে মঙ্গলবার ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৯ জন।
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তার অনুসারীরা। তারা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।