ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ : সংখ্যালঘুরা আগের তুলনায় বেশি ‘নিরাপত্তা’ পাচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ৯:২২:২৪ অপরাহ্ন
ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর : আসিফ নজরুল
জালালাবাদ রিপোর্ট : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ভারত ও ভারতের গণমাধ্যমগুলো অনবরত প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। সম্প্রতি ইসকন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রচারণার মাত্রা আরো বাড়িয়েছে। অথচ ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। এর প্রেক্ষিতে সরকারের আইন উপদেষ্টা বলছেন, সংখ্যালঘু নিয়ে ভারত দ্বি-চারিতা করছে- যা চরম আপত্তিকর ও নিন্দনীয়।
এরআগে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার কাজ ও বক্তব্য একান্তই তার নিজের। এর দায় নেবে না ইসকন।
গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে।
মাত্র ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য আগের চেয়ে খারাপ নিরাপত্তা দিচ্ছে। ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।
জরিপে এক হাজার উত্তরদাতাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়।
বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের জন্য এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে সমানসংখ্যার নারী ও পুরুষ ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকের একটু বেশির বয়স ৩৪ বছর বয়সের নিচে। উত্তরদাতাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।
সংখ্যালঘুদের স্বস্তির জায়গা :
জরিপে দেখা গেছে, মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। অন্যদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ এই ধারণার সঙ্গে একমত। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে, আগের তুলনায় তারা বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে শঙ্কা ছিল, সে শঙ্কা ক্রমান্বয়ে কেটে উঠছে। একধরনের স্বস্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আসতে শুরু হয়েছে।
ভারতের দ্বি-চারিতার অভিযোগ উপদেষ্টার :
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুক্রবার এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। প্রকাশিত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপে এটি দেখা গেছে।
আসিফ নজরুল লিখেছেন, আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদ্রাসা, রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।