বিএনপি-জামায়াতের অভিন্ন সুর, আলোচনায় ‘জাতীয় ঐক্য’
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৫২:৩২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : চট্টগ্রামে বিতর্কিত ইসকন নেতা গ্রেফতার ও এর সূত্রধরে আইনজীবী হত্যা, ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভসহ বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার উত্তাপ দেশজুড়ে। এরসাথে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অযাচিত বিবৃতি। এ নিয়ে যেমন উদ্বেগে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দলগুলো, তেমনি উদ্বেগে সরকারও।
প্রধান উপদেষ্টা টানা দু’দিন দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অভিন্ন সুরে ‘ঐক্যের’ কথা বলেছে দুই দল। অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব ও সরকারের সুরও অভিন্ন। তবে এ ঐক্য কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট হচ্ছেনা এখনো।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি-জামায়াতের বৈঠকের পর নির্বাচন, কূটনৈতিক সম্পর্ক, আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ, নানামুখী চাপ মোকাবিলা ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মানুষের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে দেশের প্রায় সব পক্ষ ‘ঐকমত্য’ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। জাতীয় ঐক্যের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে বিবৃতিটি শেয়ারও করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশ নতুন সূচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরপর অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমাজের সব অংশের ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। বর্তমানে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার, অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ প্রশস্ত করে- এমন প্রয়োজনীয় সংস্কারের জরুরি কাজের মুখোমুখি জাতি।
এই পটভূমিতে পতনশীল শাসকগোষ্ঠীর বাহিনী তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের প্রকাশ্য ও গোপন সমর্থন নিয়ে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং সহিংসতার উসকানি দিয়ে দেশে সক্রিয়ভাবে বিভেদ বপন করছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিপীড়নের অতিরঞ্জিত, অলঙ্কৃত এবং মাঝেমধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রতিবেদনের একটি সমন্বিত প্রচারণা রয়েছে। এই প্রচারণার ফলে দুর্ভাগ্যবশত গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক দেশের জাতীয় ঐক্য, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। ভারত থেকে হাসিনা বাংলাদেশের প্রতি ভয়ঙ্কর হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। এই হুমকির মুখে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য আমরা ধর্ম, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, আদর্শ, লিঙ্গ, বয়স বা অন্য যেকোনো বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে সব বাংলাদেশির প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠের জন্য আমাদের সংহতি প্রকাশ করি।
বিবৃতি দাতাদের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশ গবেষণা বিশ্লেষণ ও তথ্য নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ড. রুমি আহমেদ খান, ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির প্রতিষ্ঠাতা ড. শামারুহ মির্জা, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ডা. শফিকুর রহমান, আইনজীবী এহতেশামুল হক, অর্থনীতিবিদ ও লেখক মো. জ্যোতি রহমান, বিজ্ঞানী ও কর্মী ডা. ফাহাম আবদুসসহ অনেকে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমানও জাতীয় ঐক্যের বার্তা দেন। তাদের এই বার্তার পর আলোচনায় নতুন মাত্রা পায় ‘জাতীয় ঐক্য’।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘এনগেজমেন্ট’ বাড়াতে সরকারপ্রধানকে পরামর্শ দেন জামায়াত আমীর। ড. ইউনূস তাতে ঐকমত্য পোষণ করেন। ভারত থেকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চলছে-তা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে তিনি এখন থেকে সব অপপ্রচারের পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরা হবে বলে জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য তিন উপদেষ্টাও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক-এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দল, জনগণ বা সরকার এখানে আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশের অখ-তা রক্ষা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার এ কাজ সবার। এই ঐক্য ধরে রাখলে আশা করি, আর কখনোই ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না।
সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করেছেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম একজন ড. কামাল হোসেন, জেএসডি-জাসদ সভাপতি আ স ম রবসহ অনেকে। ওদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চলমান অস্থিরতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। তাদের দৃঢ় সন্দেহ, ক্ষমতাচ্যুতদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তা মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যদিও স্পষ্ট হচ্ছে না-জাতীয় ঐক্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, কীভাবে হবে এ ঐক্য।
সাংবাদিক-কলামিস্ট ও বাংলভিশনের ডেপুটি হেড অব নিউজ মোস্তফা কামাল লিখেছেন, প্রকৃতপক্ষে একটি ঐক্যের ফলই ৫ আগস্ট। একমাত্র তখনকার ক্ষমতাসীন ও তাদের সহযোগী-সুবিধাভোগী কিছু দল এবং মহল ছাড়া বাদবাকি সবাই ছিলেন ঐক্যভুক্ত। ধীরে ধীরে ওই ঐক্যে কিছুটা গোলমাল। সেইসঙ্গে অবিশ্বাস-সন্দেহ।
এই সুযোগে ভর করেছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এ বাস্তবতায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। প্রধান উপদেষ্টার কাছে বড় দল বিএনপি-জামায়াতের আকাঙ্খা-তাগিদ-আবদার-দাবিও জাতীয় ঐক্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আকাঙ্খিত এ জাতীয় ঐক্য দৃশ্যমান হবে কবে-কিভাবে?