আমিরাতের কারাগার থেকে ফিরলেন শান্তিগঞ্জের দুলাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:০৬:৪০ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : আলী আহমদ দুলাল, বয়স ৩৪। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালী গ্রামের মরহুম সিদ্দিক আলী মেম্বারের ছোট ছেলে। দেশে থাকতে ছাত্রদলের রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো পুরো সময়। স্ত্রী মরিয়ম, ৮ বছর বয়সী ১ মেয়ে ও ৩ বছর বয়সী ১ ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলো আরব আমিরাতে। লক্ষ্য ছিল ভাগ্য বদল। কিন্তু রাজনীতি ও প্রতিবাদ যার রক্তে সে কি নিরব থাকতে পারে।
সেই আবেগ থেকেই গত ১৯ জুলাই আরব আমিরাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন একদল যুবক। সেই মিছিলে অংশ নেন আলী আহমদ দুলাল। সেখান থেকেই গ্রেফতার হয় সে। এরপর আমিরাত সরকার সেদিন মিছিলে অংশ নেয়া শতাধিক বাংলাদেশীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। সেই সাজায় পড়ে যান দুলাল।
৪ আগস্ট থাকে গ্রেফতার করে দুবাই পুলিশ। এরপর থেকে টানা ৩ মাস নিখোঁজ ছিলেন দুলাল। এরপর থেকে অন্ধকার নেমে আসে দুলালের পরিবারের সদস্যদের জীবনে। কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলেন না দুলালের স্ত্রী মরিয়ম। ৮ বছর বয়সী ১ মেয়ে ও ৩ বছর বয়সী ১ ছেলেকে নিয়ে অকুল সাগরে ভাসতে থাকেন তিনি। কবে ফিরবেন, কোনদিন কি ফিরতে পারবেন এমন আতঙ্কে কাটছিলো মরিয়মের দিন। ১ মাস আগে বিশেষ মাধ্যমে দুলালের খবর মিলে যে দুবাই কারাগারে আছে। অবশেষে তাদের জীবনের আধার কেটেছে। বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দণ্ডিত হওয়ার পর ক্ষমা পাওয়া আলী আহমদ দুলাল ফিরেছেন। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবুধাবি থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন দুলাল।
দৈনিক জালালাবাদকে এই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দুলালের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার।
জানা গেছে, গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী, দেশটিতে বিক্ষোভ করা অবৈধ। মূলত সেই কারণে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ৫৭ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ।
ইউএইর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ওয়াম) তখন জানিয়েছিল, আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তারা বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাস্তায় বড় আকারের মিছিল সংঘটিত করেছিল। ফলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সেই সঙ্গে আইন প্রয়োগের কাজে বাধা এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগও তোলা হয়।
আটক হওয়া ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আইন ভঙের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ৫৩ জনকে ১০ বছর করে এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ ঘোষণা করেন বিচারক।