মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া ছুটছেই, খাদ্য প্রায় ১৪ শতাংশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:২১:১৩ অপরাহ্ন
দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে
জালালাবাদ রিপোর্ট: মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া ছুটছেই। দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে। নভেম্বরেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি রয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা প্রায় ১৪ শতাংশে উঠে গেছে। মাসটিতে সারাদেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।কোনো দেশ বা অঞ্চলের সামগ্রিক পণ্য বা সেবার দাম বাড়ার প্রবণতাকে নির্দেশ করে মূল্যস্ফীতি। তবে অর্থনৈতিক সংকোচনের কারণে এর উল্টো ঘটনা ঘটে, যা ঋণাত্মক মূল্যস্ফীতি হিসেবে পরিচিত।বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নভেম্বর মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ০ দশমিক ৫১ শতাংশ। এছাড়া এ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় অর্থনীতির নীরব ঘাতক। এই ঘাতক কতটা নির্মম হতে পারে, নি¤œ আয়ের মানুষেরা তা হারে হারে টের পান। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, কারণ, নি¤œ আয়ের মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ চলে যায় খাদ্যের পেছনে।
সবজির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় অক্টোবর মাসে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় সবজি ও চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমদানি করা পণ্যের দামেও লাগাম টেনে ধরা যায়নি। ডলারের দর স্থিতিশীল থাকা, কিছু খাদ্যপণ্যে শুল্ক কমানো, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার পরও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা রয়েই গেছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
দেউলিয়াত্ব থেকে ফিরে আসা দ্বীপদেশ শ্রীলংকায় মূল্যস্ফীতি প্রায় তিন মাস ধরে ঋণাত্মক পর্যায়ে। কিন্তু বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য সংকোচন না হওয়ায় মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বাবদ মানুষের খরচের হিসাবের ভিত্তিতে প্রতি মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বিশ্লেষণ করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কত বাড়লো তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এটির ১২ মাসের গড় হিসাব করে তৈরি হয় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত।
গ্রাম ও শহর এলাকার বিবেচনায় শহরের তুলনায় গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে উঠে এসেছে সিপিআই তথ্যে। তবে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও নভেম্বরে এসে এ চিত্র পাল্টে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে।
নভেম্বরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, অক্টোবরে যা ছিল ১১ দশমিক ২৬ ভাগ। গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। নভেম্বরে গ্রামাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৪১ ও ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবরে যা ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭৫ ও ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, এবং গত বছরের নভেম্বরে যা ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮৬ ও ৮ শতাংশ।
নভেম্বরে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ; অক্টোবরে যা ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। নভেম্বরে শহরাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৬৩ ও ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালের অক্টোবরে যা ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৫৩ ও ৯ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরে যা ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫৮ ও ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নভেম্বরে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের কাছাকাছি। বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের গড় চলন্ত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। সারা দেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাটবাজার থেকে নির্ধারিত সময়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই ভোক্তা মূল্য সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।