ছাতকে ৭ ইউপি চেয়ারম্যান লাপাত্তা : ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:৫৩:২৬ অপরাহ্ন
ছাতক প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এসব জনপ্রতিনিধিরা মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে নিজ নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। কোন কোন জনপ্রতিনিধি কিছুদিন কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করলেও এক সময়ে তারা আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে দুজন আছেন প্রবাসে ও ১ জন কারাগারে। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে স্থানীয় ভুক্তভোগী জনসাধারণরা কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউপি চেয়ারম্যান ও ১ পৌরসভার মেয়রসহ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পৌরসভা মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কিরণ ও তার পিতা সৈদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সুন্দর আলী চলে যান যুক্তরাজ্যে।
বর্তমানে ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত রয়েছেন আ’লীগ নেতা ছাতক সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, নোয়ারাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আবদুল খালিক রাজা, ইসলামপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি এডভোকেট সুফি আলম সোহেল, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আবদুল হক, ভাতগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাস্টার আওলাদ হোসেন, দোলারবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নুরুল আলম।
কানাডায় গিয়ে প্রায় এক বছর ধরে অনুপস্থিত বিএনপি নেতা চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত। তার ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল মতিন। এছাড়া কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অদুদ আলম মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করে জামিনে এসে আরেক মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আছেন আত্মগোপনে। সিলেটের একটি মামলায় র্যাবের হাতে তিনি গ্রেফতারের পর কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মো. তাজ উদ্দিন। দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক মামলায় কারাগারে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান তালুকদার (জাহাঙ্গীর)। উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ একটি মামলায় সিলেটে র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্যানেল চেয়ারম্যান খালেদ আহমদ খলিল। জামিনে এসে বর্তমানে চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মো. শাহেল মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে যাওয়ায় এখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ, ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ আত্মগোপনে থাকায় ওই পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া। গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুন্দর আলী পালিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ায় এখানের প্যানেল চেয়ারম্যানও প্রবাসে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেউ নেই।
তবে ইউপি সদস্য আলমগীর কবির ও ইউপি সদস্যা জেসমিন বেগম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রশাসক হিসেবে এসেছেন। শনিবার তাদের সাথে তিনি বৈঠক করবেন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আত্মগোপনে থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এসব ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে জনগণের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।