উত্তেজনাকর সময়ে ঢাকায় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব : সম্পর্কে মেঘ জমেছে, সরাতে চায় দুইদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:১০:৫৬ অপরাহ্ন
অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর বার্তা বাংলাদেশের * ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্যে সরকার অসন্তুষ্ট
জালালাবাদ রিপোর্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। একদিকে যেমন ভারতের মিডিয়াগুলো থেকে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার চলছে, অন্যদিকে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ভারতে বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। তার সেই বক্তব্য নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভিত্তিহীন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে।
উত্তেজনাকর এই সময়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সফর করলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি সাক্ষাত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে। বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পরাষ্ট্র সচিবের সাথে।এসব বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। বাংলাদেশও বলেছে, এটি দূর করতে হবে জনগণের স্বার্থে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানোর সুযোগ নেই বলে দিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী দিল্লি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে এটি বিক্রম মিশ্রির প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করে যেসব বক্তব্য রাখছেন, তাতে সরকারের অসন্তুষ্টির কথা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিক্রম মিশ্রিকে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের কিছু হলেও সেটি এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই বলে দিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন- সংখ্যালঘু বিষয়ে আমরা বলেছি, তাদের কোনো সংশয় থাকলে তারা আমাদের দেশে এসে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। জসীম উদ্দিন আরও বলেন, আলোচনায় আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকান্ড কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকা- সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এদিকে, বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও ইতিবাচকভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ভারত। এ জন্য দুই দেশের জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী দিল্লি।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, আমাদের মধ্যে অত্যন্ত খোলামেলা, গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। আমি জোর দিয়ে বলেছি যে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক চায়। আমরা অতীতেও দেখেছি এবং ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ককে একটি জনকেন্দ্রিক ও জনমুখী সম্পর্ক হিসেবে দেখব। যে সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে সব মানুষের কল্যাণ। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, পরস্পরের জন্য সহায়ক এই সহযোগিতা আমাদের উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে অব্যাহত থাকবে না, এটা ভাবার কারণ নেই। আমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য ভারতের আগ্রহের কথা তুলে ধরেছি। একই সময়ে আমরা কিছু সাম্প্রতিক পরিস্থিত এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, আমি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত আমাদের উদ্বেগগুলো জানিয়েছি। আমরা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক সম্পত্তির ওপর হামলার কিছু দুঃখজনক ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছি।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাত :
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর যমুনার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, অপপ্রচারের জবাব লিখিত ও মৌখিক-বহুভাবেই বলেছি, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ খুবই কম। সেগুলো কখনো কখনো ব্যক্তিগত, বেশির ভাগই রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার না এটির অংশ, না এটি কোনোভাবেই বরদাশত করছে। যেখানে যেখানে এ রকম অভিযোগ এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে যে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, এই মেঘটি দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, এই মেঘটি দূর করতে হবে।