সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধে পিআইসি পেতে পুরনোরা মরিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:৪৯:২৯ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধে আওয়ালীগের শাসনামলে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠে। হাওরের সবকটা পিআইসি আওয়ালীগের নেতারা ভাগিয়ে নিতেন। প্রতিটি পিআইসি পেতে ১ লাখ টাকা করে ঘুষ দিতে হতো। হাওরের বাঁধ বাণিজ্য ছিল খোলামেলা। এবার আওয়ালীগের লোকেরা সরাসরি পিআইসি পেতে মরিয়া না হলেও তলে তলে অন্য নামে পিআইসিতে ভাগ বসাতে চাইছেন। পিআইসি পেতে টাকা লেনদেনের লাইন খুঁজছেন নেতারা। তবে এখনও ঘুষের বড় ধরনের আওয়াজ নেই হাওরে। অনেকেই বলছেন আর ক’টা দিন পর ঘুষের লেনদেন চলার আশংকা আছে। হাওরে এটাও চালু আছে পুরনোরাই অন্য নামে পিআইসি পেতে আবেদন করেছেন। এ কারণেই এবার পিআইসি পেতে আগের চেয়ে আবেদন পড়েছে বেশি।
এদিকে, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী শিশির মনির হাওরের বাঁধ লুটপাট বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও জেলা প্রশাসক বরাবর সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন। তিনি লাইভে এসে বলেছেন, হাওরের প্রকৃত কৃষকরাই যেন পিআইসি পায়। এ জন্য মুক্ত আলোচনা করে পিআইসি নির্ধারণ করা দরকার। যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। জানা গেছে, জেলার ১২ উপজেলায় এবার ১২৫ কোটি ১৯ লাখ ৪২ হাজার টাকার বাঁধের কাজ করার জন্য রোববার শেষদিন বিকাল পর্যন্ত আবেদন পড়েছে দুই হাজার ২৬৭ টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে শাল্লা উপজেলায় ৬০৮ টি। রোববার বিকালে জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় চার কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮ টি প্রকল্পের জন্য পিআইসি হতে ৬৪ টি, তাহিরপুর উপজেলায় ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৭২ টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় সাত কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ টি প্রকল্প বাস্তায়নের জন্য ৬৮ টি, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় তিন কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৬১ টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৯ কোটি ১৫ লাখ দুই হাজার টাকা ব্যয়ে ৮৬ টি প্রকল্পের জন্য ৩৬৯ টি, মধ্যনগর উপজেলায় সাত কোটি ২৮ লাখ তিন হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৮৩ টি, জগন্নাথপুরে ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৯ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৮২ টি, শান্তিগঞ্জে নয় কোটি ৮৬ লাখ তিন হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৩ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৭০ টি, ছাতকে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫০ টি এবং দোয়ারাবাজারে সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৭ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯০ টি, দিরাই উপজেলায় ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৫০ টি এবং শাল্লা উপজেলায় ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১৫ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৬০৮ টি আবেদন জমা পড়েছে। রোববার পর্যন্ত আবেদনের শেষ সময়সীমা থাকলেও সোমবারও অনেকে পিআইসি হতে আবেদন করেছেন।
সদর উপজেলার জোয়ালভাংগা হাওরের কয়েকজন কৃষক জানান, আওয়ামীলীগের ও জাতীয়পার্টির নেতারা বিএনপিমনা কৃষকদের নিয়ে পিআইসি নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এরাই আগে বাঁধে ব্যাপক লুটপাট করেছে। আমরা চাই আগে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত কৃষক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ হলে অনিয়মের মাত্রা কমে আসবে এবং ফসলডুবির শংকাও কমবে। জামায়াত নেতা সিরাজুল হক ওলি জানান, হাওরে বাঁধ নিয়ে বাণিজ্য হয় বেশি। এটি হাওরের সিজনাল ব্যবসা। হাওরে ৩০ ভাগ কাজ হয় বাকি টাকা লুট হয়। লুটপাট বন্ধ করতে পারলে বাঁধ শক্তিশালী হবে এবং ফসলও রক্ষা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের জন্য কাজ করছেন। তাদের কারোর-ই নির্দেশিত নীতিমালার বাইরে যাবার সুযোগ নেই। আবেদনকারীদের কাগজপত্র দেখা হবে। গণশুনানীও করবে, এভাবে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন হবে।