শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:৪৬:১০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক:দেশে গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আর এই অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে একটি জাতীয় দৈনিকের আয়োজনে ‘প্রথম বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা সম্মেলন ২০২৪’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম তখন শিক্ষক নিয়োগে নিয়মনীতি মানা হতো। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাষক নিয়োগের প্রচ- অনিয়ম শুরু হয়েছে। শুধু দলীয়করণ নয়, দুর্বৃত্তায়ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো অনেক শিক্ষক আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ পর্যায়ের গবেষক। আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটগুলোতে খুঁজলেই জানা যাবে তাদের গবেষণার সংখ্যা। পাশাপাশি তাদের গবেষণার সাইটেশনের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য যা নিয়ে আলোচনা আমাদের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় হতে দেখি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শুধু রাজনৈতিক আলাপ হয়, মেধাবী শিক্ষকরা আড়ালে পড়ে থাকেন। কেন তাদের আড়ালে থাকা বা কোণঠাসা হয়ে থাকা তা জানতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে ঢালাওভাবে কিছু বলা মুশকিল। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতেও উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়। সব মিলিয়েই একটা বড় সমস্যা হলো, এইচএসসি পাস করার পর বেশিরভাগ মেধাবী ও সামর্থ্যবান পরিবারের ছাত্ররা বিদেশ চলে যেতে চায়, যা আগে দেখা যেত না। র্যাংকিং নিয়ে বারবার কথা হচ্ছে। কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং এ স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের ভিন্নতা আছে। আমাদের উচ্চশিক্ষায় যে বড় সমস্যা আছে তা বোঝা যায় যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করে শিক্ষার্থীরা যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিদেশে চলে যায়। দেশে উচ্চশিক্ষা শেষেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ কর্মহীন থেকে যায়। উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে সমস্যা আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নেই। এসবের কারণ সবার জানা, দলীয়করণ ও দুর্বৃত্তায়ন।
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি, উচ্চ শিক্ষায় দলীয়করণ ও অপরাজনীতির উদাহরণ হল শিক্ষাঙ্গনে মেধার অবমূল্যায়ন। জামাল নজরুল ইসলামের মতো আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী যখন কেমব্রিজ ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন, আমরা কী তাকে মূল্যায়ন করতে পেরেছি? শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। বলেন, হঠাৎ করে সেটি হবে না। কাদের দিয়ে শুরু করব? প্রাইমারি শিক্ষা? নাকি বেসরকারি খাতের এমপিওভুক্ত শিক্ষক যারা ১২ হাজার টাকা বেতন পেয়ে নিজ বাড়ি থেকে দূরে থাকেন? নাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান বাড়াবো?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য পদায়ন শুরু হলেও অনেকে লেখালেখি করেছেন, বলা হয়েছে গতানুগতিক রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু যাদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের গবেষণার ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার সাইটেশন আছে। একজন শিক্ষকের পাঁচ হাজারের বেশি সাইটেশন থাকলে তো তিনি অনেক বেশি গবেষণা করেন বলে বোঝা যায়। তাহলে তিনি রাজনীতি কখন করার সুযোগ পান?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজগুলো গ্রামে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনার্স-মাস্টার্স খুলে বসেছে, কিন্তু শিক্ষক নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এটি কেন করা হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না। এর ফল কী হবে, তা নিয়েও ভাবতে হবে। এসব জায়গায় শিক্ষক নেই, শিক্ষার মান নেই। ফলে পড়াশোনার পর এসব শিক্ষার্থীদের কী হবে, সে চিন্তা করতে হবে।