দাম বেড়েও স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের সরবরাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০:০৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে সৃষ্ট নৈরাজ্য নিরসনে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে প্রতি লিটারে তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। একইসঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়নে তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কোনও কার্যকর ফলাফল বাজারে মেলেনি। এখনও সয়াবিন তেলের সংকটে ভুগছেন গ্রাহক ও খুচরা বিক্রেতারা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা অর্ডার এবং অগ্রিম টাকা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। গ্রাহক পর্যায় থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। কেউ কেউ দাম রাখে বেশি। আবার কেউ অন্যান্য পণ্য না কিনলে বিক্রি করছে না। রোববার সিলেট নগরীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রায় এক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। তখনই ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা অনুমান করে বলেছিলেন, তেলের দাম হয়তো বাড়তে যাচ্ছে। তাদের অনুমানকে সত্য প্রমাণ করে গত ৯ ডিসেম্বর সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রতি লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা।
এদিকে দাম বাড়ানোর পরে বাজারে পুরাতন মূল্যের তেল পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নতুন বা পুরাতন কোনও মূল্যের তেলই পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব খুচরা বিক্রেতা পাচ্ছেন, তাদেরও অন্য পণ্য কেনার বিনিময়ে পেতে হচ্ছে সয়াবিন তেল।
নগরীর সুবিদবাজারের বিক্রেতা শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমি ১৫ দিন আগে অর্ডার ও অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছি। বৃহস্পতিবার আমাকে তিন কার্টন তেল দিয়ে গেছে। এই তিন কার্টন তেল কিনতে আমার ১০ হাজার টাকা লেগেছে, কিন্তু আমাকে ১৫ হাজার টাকার আটা, পোলাও চাল আর লবণ কিনতে হয়েছে। এখন আমি খালি তেল বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি। ১০ আইটেম মাল কেউ কিনলে আমি তেল দেই, না হলে দেই না। কারণ আমার নিজের কাছেই নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি ডিস্ট্রিবিউটরদের চাপও দিতে পারি না। চাপ দিলে এই দুই-তিন কার্টন তেলও দেবে না।’ রিকাবীবাজারের এক দোকানদার বলেন, ‘আমাদের তেল দেয় না। আমরা ডিলারের কাছে বললে তারা বলে, তেল নাই। ডিলার যদি না দিতে পারে তাহলে আমরা কীভাবে পাবো?’
আম্বরখানার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘১৫ দিন আগে অর্ডার দিয়ে গতকাল দুই কার্টন তেল পেয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত, কোম্পানির কাছে মাল আছে। তারা দাম বাড়ালো কিন্তু এখনও তেল দিচ্ছে না।’একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানি তেল দেয় না, বিক্রি করবো কীভাবে। তাই এখন খোলা তেলই বিক্রি করতে হচ্ছে। যারা তেলের সঙ্গে আটা-পোলাও চাল বা অন্য মাল বেশি অর্ডার করে তাদের তেল দেয়। যাদের দোকানে বেশি মাল রাখতে পারেনা তাদেরকে তেল দিতে চায়না।
বাজার করতে আসা আকবর হোসেন বলেন, কতদিন ধরে তেল নিয়ে একটা খেলা চলছে। দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। এলাকার দোকানে তো পাইই না। এভাবেই চলে যাচ্ছে।আরেক ক্রেতা সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা বলছে তেল নেই, তাদের কাছে তেল আছে। বিক্রি করছে না। সামনে রোজা, তখন আরও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করবে। আহসান হাবীব বলেন, তেলের দাম বাড়লো কিন্তু তেল পাই না। যেই দোকানে পাই সেখানে আবার সঙ্গে অন্য কিছু কিনতে হয়। নইলে খালি তেল বিক্রি করে না। আবার যারা খালি তেল বিক্রি করে তারা বেশি দাম রাখে।’
ক্রেতা কাউসার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আছি বিপদে। বেশি দাম দিয়ে কিনে খাবো সেটাও পাই না। আসলে ব্যবসায়ী আর সরকার যে কী চায়, সেটাই আমরা বুঝতে পারি না। তারা কী আরও দাম বাড়াতে চায়?
জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন। এ সময় বাণিজ্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিনসহ দেশের ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা লিটারে বিক্রি হতো।