হাওরে জলাবদ্ধতায় বোরো আবাদ বিলম্বিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:৪৩:২২ অপরাহ্ন
জসিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের বড় একটি হাওরের নাম পাকনার হাওর। এ হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের বোরো আবাদ করতে বিলম্ব হয়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০/২৫ দিন পিছিয়ে পড়ে। এতে সময়মত ফসল ঘরে উঠেনা, আগাম বন্যার কবলে ফসল তলিয়ে যায়। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ৪০/৪৫ গ্রামের কৃষক।
জানা গেছে, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, লক্ষীপুর ইউনিয়ন, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন ও ভীমখালী ইউনিয়নের কৃষকরা পাকনার হাওরে বোরো আবাদ করে থাকেন। হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়ায় তাদের। কিন্তু হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ হাওরে পানি নিষ্কাশনের রাস্তায় গজারিয়া স্লুইসগেট ও ঢালিয়া স্লুইসগেট পর্যন্ত পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে সময়মত পানি নিষ্কাশন হয়না। ধান রোপণের এ সময়ে হাওরে মাঝখানেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে, সেখানে ফসল লাগানো সম্ভব হয়ে উঠেনা। ধান রোপণের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ২০/২৫ দিন বিলম্ব হয়, এতে ফসল সময়মতো উঠানো যায় না, আগাম বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
স্থানীয় কৃষক সিরাজুল হক ওলি বলেন, ১৪ হাজার ৪৪৮ হেক্টর বিস্তীর্ণ পাকনার হাওরে আবাদি জমি রয়েছে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও অনাবাদী ২৯০০ হেক্টর। যা থেকে আনুমানিক ৬৫ হাজার ৫০০ মেঃ টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। হাওরের পানি নিষ্কাশন করা না হলে বোরো আবাদ বিলম্বিত হবে এবং আগাম বন্যায় ফসলহানির শংকা থাকে। তাই ফসলরক্ষার দাবি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। হাওরের জলাবদ্ধতা দুর করতে গজারিয়া স্লুইসগেট ও ঢালিয়া স্লুইসগেটের নালা খনন করে দিলে হাওরে বোরো আবাদ করে ঘরে ফসল উঠানো সম্ভব।
এ উপজেলায় আরেকটি হাওরের নাম বাড়িরনামা হাওর। এ হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকরা ধান রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাড়িরনামা হাওরের মাঝখানে একটি বিল থাকার কারণে পানি নিষ্কাশন করা যায়না। বিলের মালিকরা সময়মত পানি ছাড়েননা। এছাড়া হাওরের জলাবদ্ধতা দুর করতে সরকারের কোন দৃষ্টি নেই। ইউপি সদস্য যিশু বলেন, এ হাওরে প্রায় ১০০ একর জমি রয়েছে। এখনও জলমগ্ন আছে হাওর। পানি নিষ্কাশন না হলে কৃষকরা বোরো আবাদ করতে পারবেননা। যত দ্রুত সম্ভব হাওরে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
এভাবে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ উপজেলাসহ কয়েকটি হাওরে পানি না নামায় বোরো আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে এবং কৃষকেরা ফসলডুবির শংকা করছেন। হাওর আন্দোলনের নেতা সদরুল আলম সাইফুল বলেন, হাওরের স্বাভাবিক পানি প্রবাহকে অস্বীকার করে অপরিকল্পিত বাঁধ, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব না। হাওরের বুক বরাবর সড়ক বা বাঁধ নির্মানের ফলে হাওরের উচ্চতা হ্রাস পায়। যা মাছ ও ধান উৎপাদনে অন্তরায়। বর্তমান সরকারকে সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করে জলাবদ্ধতা দুর করে ফসলরক্ষার আহবান জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, পাকনার হাওরসহ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতা দুর করতে পাউবোকে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি দ্রুত হাওরের পানি অপসারণ হবে এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ফসলরক্ষার জন্য ৫৩টি হাওরে ৫৭ কোটি ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকটি হাওরে পানি নিস্কাশনের জন্য আমরা পাম্প লাগিয়ে পানি সরাচ্ছি। যেখানে খনন করে পানি অপসারণ করা প্রয়োজন সেখানে প্রকল্প হাতে নিয়ে খননের উদ্যোগ নিয়েছি।