সীমান্তে বাংলাদেশী পণ্য পাচার বেড়েছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:৩১:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: সীমান্তে পাচারের বিষয় সামনে এলেই সবার মনে আসে ভারত থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশের আসা পণ্যের কথা। তবে এবার বাংলাদেশ থেকেও ভারতে পণ্য পাচার হচ্ছে। উভয় দেশের চোরাকারবারির মাধ্যমে এসব পণ্য রাজস্ব ছাড়াই পাচার হচ্ছে। গত কিছুদিনে বিজিবির সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান থেকে তথ্য সামনে এসেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা বিভিন্ন পণ্যের চেয়ে ভারতীয় পণ্য বেশি জব্দ করছে বিজিবি। এতদিন বাংলাদেশ থেকে পাচার করা পণ্য নিয়ে আলোচনা না থাকলেও সম্প্রতি বিষয়টি সামনে আসে। ফলে বিজিবি এখন বাংলাদেশ থেকে পাচার করা পণ্যের ওপরও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে।
এসব পণ্যের মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশি রসুন। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ, সুপারি, মটরশুঁটি, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও বিভিন্ন চিপস। তথ্য বলছে, সিলেট সীমান্তের ওপারে শিলং, গৌহাটিসহ বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি ওইসব পণ্যের কদর বেশি। এ কারণে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের বিপরীতে চোরাই পথে এসব পণ্য কিনে নেয় ভারতীয় কারবারিরা।
বিজিবি ও চোরাকারবারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের ৮০ স্থান দিয়ে চোরাচালান হয়। এসব পয়েন্ট দিয়ে গরু, মহিষ ছাড়াও চিনি, পেঁয়াজ, শাড়ি, থ্রিপিস, সানগ্লাস, প্রসাধনী সামগ্রী, চকলেট, গাড়ির যন্ত্রাংশ, চা পাতা, মোটরসাইকেলসহ ভারতীয় পণ্য চোরাই পথে বাংলাদেশে আনা হয়। এসবের মধ্যে অন্তত ১৫ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে পাচার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সীমান্ত হচ্ছে জৈন্তাপুরের শ্রীপুর, আলুবাগান, ডিবির হাওর, মিনা টিলা, গোয়াবাড়ী, লালাখান, কানাইঘাটের সুরইহাট, সোনাতনপুঞ্জি, গোয়াইনঘাটের উৎমা, প্রতাপপুর, সোনাটিলা, আমস্বপ্ন ও সংগ্রামপুঞ্জি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ও ছাতকের সোনালি চেলা উল্লেখযোগ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জৈন্তাপুর সীমান্তের এক চোরাকারবারি জানিয়েছেন, ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বেশি আসে বাংলাদেশে, পাচার হয় কম। এর মধ্যে যেসব পণ্য ভারতে দাম বেশি এবং পাওয়া যায় না, সেগুলো বাংলাদেশ থেকে তারা নিতে আগ্রহী। তিনি জানান, সিলেট সীমান্ত এলাকার ওপারে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী অনেক বাজার রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশি কিছু পণ্যের কদর বেশি। এর মধ্যে রসুন, স্থানীয় জাতের মাছ, সুপারি, শুঁটকি ও প্লাস্টিকের সামগ্রী অন্যতম। তিনি জানান, এক সময় প্রতিদিন ৩-৪ ট্রাক পণ্য যেত।
ভারতের ডাউকি মুক্তাপুরে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির সঙ্গে ক্রেতা পরিচয়ে কথা হলে তিনি জানান, সিলেট অঞ্চলের স্থানীয় মাছের চাহিদা তাদের এলাকায় বেশি। সেখানে খাল-বিল নেই। স্থানীয় মাছ পাওয়া যায় না। সে জন্য মাছ, শুঁটকিসহ আরও কিছু পণ্য তারা বাংলাদেশ থেকে চোরাই পথে নিয়ে ভারতের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। সীমান্তে বাংলাদেশের চোরাকারবারির সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে বলে জানান তিনি।
সূত্র বলছে, ভারত থেকে চোরাই পথে আমদানি করা পণ্য নিয়ে সবসময় বিজিবি ও পুলিশ তৎপর থাকলেও বাংলাদেশ থেকে কী কী পণ্য পাচার হতো, তা ছিল তাদের ধারণার বাইরে। সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে তাদের সেই ধারণা বদলে যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই মাসে কোটি টাকার বাংলাদেশি পণ্য পাচারকালে উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য সম্প্রতি পাচারের তথ্য পাওয়ার পর সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য ও সীমান্তে বিওপি সদস্যদের তৎপরতার কারণে প্রায় প্রতিদিনই চোরাচালানের পণ্য উদ্ধার হচ্ছে।