সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডে নানা প্রশ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:০০:৫১ অপরাহ্ন
রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা, কাজ শুরু তদন্ত কমিটির
জালালাবাদ রিপোর্ট : রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি শুক্রবার কাজ শুরু করেছে। তার তীক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখছেন এটি নাশকতা না দুর্ঘটনা, কি আছে নেপথ্যে।
তবে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের। সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এলাকা। সেই স্থাপনায় মধ্যরাতে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্তব্যক্তিরাও।ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র। আগুন লাগার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে। সচিবালয়ে মধ্যরাতে লাগা এই আগুনের ঘটনা জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন তুলে তার উত্তর খুঁজছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
তবে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সামনে এসেছে পাঁচ প্রশ্ন। এক. নিরাপত্তাকর্মীদের দৃষ্টি এড়াল কী করে : দুই. শর্ট সার্কিট না অন্য কিছু : তিন. ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা : চার. সচিবালয়ের পোড়া কক্ষে মৃত কুকুর : পাঁচ. ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু ।
এদিকে, গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সচিবালয় ঘিরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কড়া পাহারা দেখা যায়। সকালে আট সদস্যের এই তদন্ত কমিটির সদস্যরা সচিবালয়ে ঢোকেন। পরে তাঁরা সচিবালয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ওসমান গণি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তানভীর মনজুরসহ তদন্ত কমিটির আট সদস্য অংশ নেন। তাঁরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন পরিদর্শন করেন।
গত বুধবার দিবাগত রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে এই ভবনে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে কম্পিউটার ও আসবাব। দেয়াল ও মেঝেতে বড় ক্ষতি হয়েছে।
পরিদর্শন ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছি। তদন্তকাজটা শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে। আজ শনিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা আবার বৈঠক করবেন।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহেদ কামাল বলেন, তদন্ত শেষ না হলে আগুন লাগার কারণ নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। সচিবালয়ের ভেতরের অবস্থা গতকালকের মতোই রয়েছে।
এদিকে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটও সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে।গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল সচিবালয় পরিদর্শন করে। এই দলের পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দেবনাথ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। আজ ( শনিবার) ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনের আশপাশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যদি এসব জায়গায় কোনো আলামত পাওয়া যায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করতে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সচিবালয়ের স্পর্শকাতর স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি সরকার খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।