হচ্ছে না বই উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:০৬:৪০ অপরাহ্ন
বই পাচ্ছেন প্রাথমিকের ৩ শ্রেণীর শিক্ষার্থী
স্টাফ রিপোর্টার : এবার নতুন বছরের শুরুতে হচ্ছেনা বই উৎসব। সকল শ্রেণীর বই ছাপা শেষ না হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে উৎসব। যদিও অনলাইনে জাতীয়ভাবে রাজধানীতে বই উৎসবের আদলে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবার সিলেটের কোন স্কুলে উৎসবের আয়োজন নেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাথমিকের ৩টি শ্রেণীর পুরো সেট বই স্কুলে পৌঁছে গেছে। ঐ ৩ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে স্ব স্ব স্কুলের শিক্ষকগণ বই তুলে দিবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের প্রাথমিক পর্যায়ের ১ম শ্রেণী, ২য় শ্রেণী ও ৩য় শ্রেণীর প্রায় ৮০ ভাগ বই চলে এসেছে। প্রাক প্রাথমিক, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর কোন বই এখনো আসেনি। তবে আগামী সপ্তাহে প্রাথমিকের সব শ্রেণীর শতভাগ বই পৌছে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম।
তিনি দৈনিক জালালাবাদকে জানান, এবার যথাসময়ে বই না আসায় উৎসব বাতিল করা হয়েছে। যেসব শ্রেণীর বই এসেছে, স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিবেন। জানা গেছে, এবার নতুন বছরে বই পাচ্ছে না মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাই আগের মতো এবার ঘটা করে বই উৎসব করা হচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ঠেকাতেই এই উৎসব বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উৎসব না হলেও স্কুলে স্কুলে বই পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা।
জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ১ জানুয়ারি মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত- এই তিনটি বই পৌঁছে দিতে পারবে। বাকি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরিয়ে যেতে পারে জানুয়ারিও। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সব বইয়ের পিডিএফ আপলোড করা হবে। কেউ চাইলে সেখান থেকেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। তাই শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মাধ্যমিকের বই সরবরাহের বিলম্বের কারণ হিসেবে জানা যায়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা সমালোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার চালু করেছিল নতুন কারিকুলাম। অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই কারিকুলাম বাতিল করে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয় আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই ছাপানোর টেন্ডারও। পরিবর্তে মাধ্যমিক স্তরে চালু করা হয় ২০১২ সালের কারিকুলাম। তাই আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই প্রস্তুত ও নতুন টেন্ডার করে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে যায় এনসিটিবি’র।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবারের শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির মোট ৬৫৫টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কাহিনি ও গ্রাফিতি। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ৩২ থেকে ৩৪ কোটি বই ছাপা হলেও আগামী বছরের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপতে হবে। এতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে।জানা যায়, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাঠ্যবইগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের অতিরিক্ত বন্দনা করা হয়েছিল। এবারের নতুন বইয়ে এসব বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক অতিকথন ও অতিবন্দনা। বাদ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বিতর্কিত বিভিন্ন লেখকের লেখাও। আগে বইয়ের ব্যাক কভারে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বিভিন্ন উক্তি ছাপা হতো। এবার সেগুলো বাদ দিয়ে ব্যাক কভারে স্থান দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিগুলো।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপার কাজ চলছে।এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১ জানুয়ারি প্রাথমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা বই পাবে। তবে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে বছরের শুরুতে তিনটি বই বিতরণ করা হবে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি ৫টি বই দেওয়া হবে। আর ২০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই বিতরণ করার চিন্তা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি।’