‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দিতে সরকারকে ১৫ দিন সময়
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
‘মার্চ ফর ইউনিটি’তে ছাত্র-জনতার ঢল
জালালাবাদ রিপোর্ট : ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ বা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণার পরিবর্তে অনুষ্ঠিত হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’। আর এতে ছাত্র-জনতার ঢল ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে সরকারকে ১৫ দিন সময় দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় এই অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় এক ঘণ্টা বাদে। এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল আর ব্যানার, পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন।
তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস, জাস্টিস, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশস্থলে পুলিশ, পুলিশের ডগ স্কোয়াড, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।শহীদ মিনারে ডিজিটাল পর্দায় দেখানো হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের তথ্যচিত্র, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দমন-পীড়নের চিত্র।
মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি থেকেই মঙ্গলবার ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা ছিল। তবে সোমবার রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরি করছে, আর তাতে সমর্থন আছে তাদের।
বছরের শেষ দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
মঙ্গলবার বিকেলে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।এসময় তিনি উপস্থিত জনতার সঙ্গে হাত তুলে বিচার ও সংস্কারের শপথ করেন। স্লোগান দিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার।সমবেতদের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মানুষের কাছে যাবেন। তাদের কথা শুনবেন এবং তাদের কথা তুলে আনবেন।” নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্র চায়। তারা সংস্কার চায়, নতুন সংবিধান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন সরকার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বিজয়।”
তিনি বলেন, সরকারকে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাইয়ের প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। আমাদেরকে বলা হয়, নতুন সংবিধান করবে তার ম্যান্ডেট কোথায়? আমরা বলি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন।নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা একইসাথে সংবিধান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন সংবিধান গঠন করবে এবং আইনসভার সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের বিচার, সংস্কারসহ নানা আকাঙ্খা চাওয়া আছে। ছাত্রজনতা অবশ্যই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি থেকেই মঙ্গলবার ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা ছিল। সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।বলা হয়েছিল, এই ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ হবে ‘আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।
ঐকমত্য গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল ঘোষণাপত্রের খসড়া। সেখানে বলা হয়েছিল, “আমরা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম জনগণ হিসেবে ঘোষণা করলাম।মঙ্গলবারের এই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্খাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।