খুলে দেওয়া হলো সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: সচিবালয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবন ১১ দিন পর খুলে দেওয়া হয়েছে রোববার। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ভবনের ৫ তলা পর্যন্ত কক্ষগুলোতে অফিস করা শুরু করলেও ৯তলা এ ভবনের উপরের বাকি ৪ তলা সংস্কার শেষ না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে। পুড়ে যাওয়া এই অংশ সংস্কার করতে কমপক্ষে ১২ দিন লাগবে বলে গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুড়ে যাওয়া ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলা ছাড়া রোববার সকাল থেকে এই ভবনে প্রবেশ করা গেলেও লিফট চলছে না। বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হলেও পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে এভবনে। অতি দ্রুত পানি, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সচল করার কাজ চলছে বলে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়িও রোববার ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকান্ডের পর থেকে উপদেষ্টা এবং সচিব ছাড়া অন্য কারও গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। অগ্নিকান্ডের পর থেকে সচিবালয়ে দর্শনার্থী, অস্থায়ী পাসধারী ও অন্য ব্যক্তিদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। অগ্নিকা-ের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা, উপদেষ্টা এবং সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরই কেবল গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হত।
পঞ্চম তলার সিড়ির মুখে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা জানান, তারা কাউকে পুড়ে যাওয়া অংশে উঠতে দিচ্ছেন না। কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি প্রাপ্তরাই সেখানে যেতে পারবেন। গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সচিবালয়ের এই ৭ নম্বর ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে ভবনটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এভবনের পাঁচতলায় পূর্ব পাশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পশ্চিম পাশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। চারতলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, তিন তলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, দুই তলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল থেকে অফিস করেছেন।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাত নম্বর ভবন পরিদর্শনে আসেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুড়ে যাওয়া ভবনের চারটি তলার সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকৌশলীরা বলেছেন তারা ১২ দিনের মধ্যে করে দিতে পারবেন। তারা চেষ্টা করবেন যত তাড়াতাড়ি সংস্কার কাজ শেষ করা যায়।
তিনি বলেন, ৭ নম্বর ভবনে এখনো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। আশা করছেন সোমবার থেকে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
পঞ্চম তলা থেকে উপরের দিকের অংশ এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দাপ্তরিক কাজ সারতে বেছে নেওয়া হয়েছে বাইরের বিভিন্ন সরকারি ভবন। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় অস্থায়ীভাবে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩, ১৪ ও ১৫ তলার তিনটি ফাঁকা তলায়। রেল ভবনের দশম তলায় বসেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহছানুল হকসহ আরও কয়েকজন। সেখানেই অফিস করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পুড়ে গেলেও সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে তথ্য মন্ত্রণালয় থাকায় সেখানে অফিস করছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তবে কর্মকর্তারা জিপিওতে কয়েকটি কক্ষে জরুরি কাজ করছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাজ করছেন ক্রীড়া ভবনে। আর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে শ্রম ভবনে। তবে পুড়ে যাওয়া ভবনের ৫ম তলায় শ্রম মন্ত্রনালয়ের কিছু অফিস থাকায় সচিবসহ কর্মকর্তাদের একটি অংশ রোববার এখানে অফিস করেছেন বলে সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর শ্রম উপদেষ্টা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা হওয়ায় তিনি নৌ মন্ত্রণালয়ে অফিস করছেন।
আগুনে মন্ত্রণালয়ের পুড়ে যাওয়া ফাইলের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। শ্রম, এলজিআরডি, সড়ক বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির জন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কমিটিগুলো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো চুড়ান্ত না করায় কি পরিমান ফাইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা চুড়ান্ত করা যায়নি।