ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচন চায় : ড. তোফায়েল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:২০:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: পৌরসভা বিলুপ্তির প্রস্তাব করতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলন কক্ষে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংসদীয় পদ্ধতিতে সকল নির্বাচনের প্রস্তাব দেব। এই উদ্দেশে আমরা একটা একীভূত আইন করতে চাই। বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পৌরসভারগুলোর আয় নাই, বেশিরভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করতে পারে সংস্কার কমিশন।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক একটা, এক এক ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা। আমরা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাই। এজন্য আমরা সংসদীয় পদ্ধতিতে সকল নির্বাচন করার প্রস্তাব দেব। এই উদ্দেশ্যে আমরা একটা একীভূত আইন করতে চাই। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে, আমরা এমন প্রস্তাব করব। বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পৌরসভারগুলোর আয় নাই, বেশিরভাগের বেতন বাকি আছে। তাই পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হতে পারে। পাশাপাশি জেলা পরিষদগুলোর সাথে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এর বাজেট বা প্রজেক্টগুলোর কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তাই একে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করতে জেলা পরিষদের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন দরকার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই জেলার অধীনে যতগুলো উপজেলা আছে, সেই উপজেলাগুলো থেকে মেম্বার নির্বাচিত হবে। এছাড়া একটি জেলা প্লানিং নামে সংস্থা হবে। তারা সকল উন্নয়ন প্ল্যান করবে এবং বাস্তবায়নের দিকটা দেখবে। এভাবে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।
ড. তোফায়েল বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের যত নির্বাচন হয়েছে তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিতভাবে যদি এই নির্বাচন করা হয়, তাহলে খরচ ৬০০ কোটি টাকার নিচে নামানো সম্ভব। আর সংসদসহ সব নির্বাচন একসাথে করা গেলে মোট খরচ এক হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাই আমাদের প্রস্তাব হবে সংসদ নির্বাচনের সাথে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলা।
সংস্কার কমিশন কবে নাগাদ প্রস্তাব জমা দিতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্য কাজ শুরু করেছি পরে। তারপরও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে দিতে চাই। নির্দিষ্ট করে বললে ২৪ ফেব্রুয়ারি।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় কাজে এমপিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টা সংবিধান সংস্কার কমিশন দেখছেন। তবে আমাদের ওখানে সাজেশন থাকবে এমপিরা যাতে লোকাল গভর্মেন্টের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ না রাখে। স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে ট্যাক্স কীভাবে লোকাল গভর্মেন্টের সাথে সমন্বয় করা যায় সে বিষয়টাও দেখা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে আরও কার্যকর করতে আমরা জনগণের পরিমাণের ভিত্তিতে ওয়ার্ডগুলোকে ভাগ করার প্রস্তাব করব। এখন লোকাল গভর্মেন্ট বহু ইউনিটে ভাগ করা রয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে ওয়ান ইউনিট করা যায় কি না আমরা সেরকম প্রস্তাব নিয়ে ভাববো। এটা এখনই করা সম্ভব। এটা একটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা। সবার জবাবদিহিতা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে সেটাও চিন্তা করা হবে। মামলা কমাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা বাড়ানো ও সালিস সিস্টেমকে আরও লিগালাইজ করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
সংস্কার কমিটির প্রধান বলেন, একজন মেম্বার বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাদের অনেক চাঁদা দিতে হয় সমাজ এটা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আইন এই খরচ বা তাদের কাজের সময় দেখা নাই। কিন্তু সেটা জনগনের মাধ্যমেই নির্ধারণ হয়ে গেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন কী হবে সেটা ঠিক করা হবে।
ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচন চায় : এদিকে ঢাকার রাজনীতিবিদরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চাইলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে ভাষ্য ড. তোফায়েলের।
জাতীয় নির্বাচন দ্রুত
করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তাড়া থাকলেও ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচন করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।তিনি বলেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যখন যাচ্ছি মানুষের কাছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রায়োরিটি হয়ে যাচ্ছে।ৃ স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও একই রকম মতামত আসছে। তার দল ন্যাশনাল লেভেলে একটা কথা বললেও ওরা লোকাল লেভেলে কিন্তু ওই লোকাল নির্বাচনটা চাচ্ছেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার যে ১১টি কমিশন গঠন করেছে, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তারই একটি। গঠনের পর ৯০ দিন, অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়েও মত বিনিময় করেছেন কমিশনের সদস্যরা। এ ধারাবাহিকতায় সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলন কক্ষে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, যেসব পলিটিক্যাল পার্টির নির্বাচন নিয়ে হাইপ রয়েছে, ইমেডিয়েট ইলেকশন চাচ্ছে; তাদের লোকাল লিডারদের আমরা যখন ডেকেছি, তারা কিন্তু দুটোই চায়। দুটো নির্বাচনই হোক।
স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, “একদল আছে যারা একসাথে (জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন) চায়; কেউ বলে এটা আগে হোক, ওটা পরে হোক। মতভেদ আছে। অনেকে চায় এটা একদিনে করে ফেললে কেমন হয়; এতে খরচও কমে যায়। আরেকদল বলছে আগে স্থানীয়টা করে স্থিতিশীলতা আসবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন করেন। তবে লোকাল লেভেলে মতামত খুবই কম এখন ইমেডিয়েট জাতীয় নির্বাচন নিয়ে, এটা ঢাকা লেভেলে আছে। ওই লেভেলে পাইনি। এটা আপনাদের ইনফরম করলাম শুধু। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত করার বিষয়ে মতামত দিচ্ছে বলে জানান কমিশন প্রধান।
এর ব্যাখ্যা তুলে ধরে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, লোকাল লেভেলের মতামত হচ্ছে, তারা বলতে বলতে চাচ্ছে, এটা একটা শূন্যতার মধ্যে আছি। এটা একটা সেবা পাচ্ছি না; আমরা কার কাছে যাব বুঝতে পারছি না। যার ফলে এখন লোকাল নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া উচিত। এটা স্থানীয় লোকদের মতামত।