চুনারুঘাটে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেলো বিএসএফ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:৩০:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। সোমবার বিকেলে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম জহুর আলী (৬০)। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুলনা গ্রামের মনসুব উল্লাহর ছেলে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও সীমান্তের ওপারের ভারতীয় লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। নিহতের মরদেহ ভারতীয় পুলিশ উদ্ধার করে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত জহুর আলী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি গত শনিবার (৫ জানুয়ারী) ৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে জহুর আলী অল্প মূল্যে কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো নিয়ে তিনি সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় সীমান্ত এলাকায় প্রচারিত হয় যে নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশের। তখন স্থানীয় বাংলাদেশিরা ঐ লাশ শনাক্তের চেষ্টা করেন।
এদিকে ভারতীয় লোকজন লাশটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাংলাদেশের অনেকেই ছবি দেখে চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের জহুর আলীর বলে শনাক্ত করেন। তবে তিনি ভারতে গেলেন কী করে, এ নিয়ে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং স্থানীয় গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মালেক বলেন, তাঁরা সীমান্ত থেকে খবর পেয়েছেন, বিএসএফ ও স্থানীয় এলাকার কিছু মানুষ জহুর আলীকে সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। পরে তাঁরা লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান। ভারতীয় লোকজন তাদের এ ঘটনা জানিয়েছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি। তবে তিনি কিভাবে সেখানে গেলেন এবং মারা গেলেন এর সঠিক তথ্য এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে স্থানীয় থানা পুলিশ বিজিবির সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে শুনেছি।
চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, খবর পেয়ে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখতে পাই, ভারতের খোয়াই পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করতে সীমান্ত এলাকায় গৌরপুরে আসে। পরে তারা এ লাশ উদ্ধার করে ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জহুর আলীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজিবি হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়ন বিজিবি জানিয়েছে- ভারত সীমান্তে নিহত জহুর আলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। তিনি গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। ৬ জানুয়ারি কোনো এক সময়ে হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন গুইবিল বিওপির মানিকভান্ডার এলাকার মেইন পিলার ১৯৬৮/এম-এর কাছ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের প্রায় ৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরে স্থানীয় জনগোষ্ঠী খোয়াই থানার অন্তর্গত গৌড়নগর এলাকায় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তিকে নিথর পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় খোয়াই থানায় খবর দেন। ভারতের খোয়াই থানা থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে নিশ্চিত করেন। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে লাশ বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।
হবিগঞ্জ বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান বলেন, বিএসএফ তাঁদের জানিয়েছে, এ মৃত্যুর বিষয়ে তাঁরা সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে জেনেছে। এর আগে তাঁরা কিছুই জানতেন না। কীভাবে জহুর আলীর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়টি তাঁরাও তদন্ত করছেন।