চট্টগ্রামে উধাও ৯ বস্তা নথি মিলল ভাঙ্গারির দোকানে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬:৫৪:২৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: চট্টগ্রাম আদালতে পিপি কার্যালয়ের সামনে থেকে উধাও হওয়া ৯ বস্তা মামলার নথি একটি ভাঙ্গারির দোকান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বস্তার মধ্যে ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথির কতটি আছে তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। উধাও বাকি নথিগুলো উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইনের ভাঙ্গারির দোকান থেকে নয় বস্তা ভর্তি নথি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মো. রাসেল (২৩) নামে আদালত এলাকার চা বিক্রেতা যুবককে আটক করা হয়েছে। আটক রাসেল কেজি ১৬ টাকা দরে ভাঙ্গারির দোকানটিতে নথিগুলো বিক্রি করে দিয়েছিল।
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, নথি হারানোর ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। ফুটেজে দেখা এক যুবককে শনাক্ত করে তাকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে ভাঙ্গারির দোকান থেকে নথিগুলো উদ্ধার করা হয়।
নথি উদ্ধারে বিস্তারিত তুলে ধরে ওসি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কার্যালয়ের সামনে থেকে মামলার নথিগুলো হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশ এই তথ্য প্রথম জানতে পারে সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে। তাৎক্ষণিক পুলিশ নথি উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টির উপর নজরদারি করছিলেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাকলিয়া বৌ বাজার এলাকা থেকে রাসেলকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইনের মফিজের ভাঙ্গারির দোকানের গুদামে তল্লাশি চালিয়ে নথিগুলো উদ্ধার করা হয়। ২৭ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সন্ধ্যার সময় নথিগুলো বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যায় বলে জানায় রাসেল। আমরা নথিগুলো যাচাই করে দেখছি। তবে সব নথি সেখানে নেই। বাকি নথিগুলো উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ভাঙ্গারির দোকানে চুরি করা নথি কেজিদরে করে দেন রাসেল। সে চট্টগ্রাম আদালত এলাকার একটি চায়ের দোকানে কাজ করে। তবে সে জানায় আদালতের বারান্দায় থাকা নথিগুলো পরিত্যক্ত মনে হয়েছে। এরপর সময় নিয়ে বস্তাভর্তি করে এসব নথি ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে দেয়া হয়। রাসেল জানায় নথিগুলো ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে ৪৩৭ টাকা নেন। নথিগুলো কীসের বা কোনো মামলার কিনা তা তিনি জানতেন না।
আদালত সূত্র জানায়, পিপির কার্যালয়ের সামনে বারান্দায় অরক্ষিত অবস্থায় ছিল এসব নথি। আদালতে ডিসেম্বরে অবকাশকালীন ছুটির সময় কিছুটা ফাঁকা ছিল পিপির বারান্দাসহ আশপাশের এলাকা। ওই সময় এসব নথি বস্তা ভর্তি করে চুরি করে বিক্রি করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
গেল ৫ জানুয়ারি ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথি উধাওয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভুঁইয়া। ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয় ১২ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব নথি হারিয়ে যায়। চট্টগ্রাম মহানগর আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাশে সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়। এই কার্যালয়ে মহানগর দায়রা জজের অধীন ৩০টি আদালতের নথি থাকে। সেখানে নথি রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে বস্তায় ভরে পিপির কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় নথিগুলো রাখা হয়। তদারকি না থাকায় সহজে চুরি করে নথি বিক্রি করার ঘটনা ঘটে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।