কুরআন সুন্নাহের অনুসরণে মানবতার মুক্তি নিহিত : মাওঃ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬:৩৮ অপরাহ্ন
এমসি মাঠে ঐতিহাসিক ৩ দিনব্যাপী তাফসীর শুরু
স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ এক যুগের বেশী সময় পর সিলেটে শুরু হয়েছে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) এর স্মৃতি বিজড়িত আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের ৩ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আনজুমানের ৩ দিনব্যাপী ৩৬তম মাহফিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ আব্দুল হাই হারুন।
আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মিফতাহুদ্দীনের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ নকিব আহমদ ও হামদ-নাত পরিবেশন করেন শাবি অঙ্গিকার শিল্পীগোষ্ঠী।
তাফসীর মাহফিলের ১ম দিনের পৃথক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম মাদানী, মাওলানা আব্দুল মতিন চৌধুরী শাহবাগী ও অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী। ৩ দিনব্যাপী মাহফিলের ১ম দিনে তাফসীর পেশ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমীন, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা কমর উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা আব্দুল হাই জিহাদী, শায়খ আব্দুল হক, ড. মাওলানা এএইচএম সোলায়মান, মাওলানা মাশুক আহমদ।
ঘোষণা পাঠ করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। মাহফিল যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, মাওলানা সাদিক সিকান্দার, মাওলানা মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা মুশাহিদ আহমদ। ক্বেরাত পাঠ করেন ক্বারী আব্দুল হাই। মাহফিল চলাকালে হামদ-নাথ পরিবেশন করেন শাবি’র অঙ্গিকার শিল্পীগোষ্ঠী, আহ্বান শিল্পীগোষ্ঠী, দিশারী শিল্পীগোষ্ঠী ও মহানগর শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।
তাফসীর পেশকালে আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী বলেন, আমরা আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমীন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার দাসত্ব করার জন্য। সকল মুসলমানকে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হতে হবে। কারণ আমাদের দুনিয়ার অর্জন অনুযায়ী আখেরাতে ফলাফল দেয়া হবে। তাই আমাদেরকে কুরআন হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার শপথ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ^ বরণ্যে মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) এর স্মৃতি বিজড়তি আনজুমানের এই মাহফিলে কুরআনের পাখিকে খুব বেশী মিস করছি। শুধুমাত্র কুরআনের কথা বলার কারণেই জালিম সরকার তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কারাগারে শহীদ করেছে। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে আমরা আমাদের কুরআনের পাখিকে শহীদ করার বদলা নেব। পূণ্যভুমি সিলেট হচ্ছে আধ্যাত্মিক রাজনীতি। সিলেটে আনজুমানের এই মাহফিল ইসলামী সমাজ গঠনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে বলে আমার বিশ^াস।
তাফসীর পেশ কালে মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমীন বলেন, কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ ছাড়া মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের কোন পথ খোলা নেই। ব্যক্তি ও পরিবার জীবনের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে কুরআন সুন্নাহের অনুসরণ করতে হবে। দীর্ঘ এক যুগ পর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) এর স্মৃতি বিজড়িত আনজুমানের এই মাহফিল ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ^াস। আল্লামা সাঈদী (র.) এর শুন্যতা কোনভাবে পূরণ হওয়ার নয়। আমরা জীবন দিয়ে কুরআনের পাখির স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে অঙ্গিকার করবো।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশে^র মুসলিমরা আজ লাঞ্চিত বঞ্চিত জাতি। এর মূল কারণ হলো আমরা দিন দিন কুরআন সুন্নাহ থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছি। অথচ মহাবিশে^র মহাবিস্ময় হচ্ছে মানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এর মধ্যে বিজ্ঞান, মহাকাশ থেকে শুরু করে বিশ^ পরিচালনার সকল তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। দীর্ঘ জুলুম-নিপীড়নের পর বাংলাদেশে ইসলামের নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই জাগরণকে এগিয়ে নিতে পারলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে।
মাহফিল ঘিরে নগরীর এমসি কলেজ মাঠে বিশাল প্যান্ডেল ও আকর্ষণীয় স্টেজ নির্মাণ করা হয়। মাহফিলকে কেন্দ্র করে যানজট এড়াতে নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ সর্বাত্মক কাজ করে। মুসল্লীদের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়। মাঠ ও মাঠের বাইরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে পর্যাপ্ত লাইট, ওয়াসব্লক স্থাপন এবং পানি পান ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়।
বেলা ১২টার দিকে এমসি মাঠ পরিদর্শন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম। এসময় তিনি মাহফিলের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং নিরাপত্তার খোঁজ খবর নেন। ১ম দিনের ন্যায় ২য় দিনও মাহফিল চলবে বিকাল ৩ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। ১১ জানুয়ারী শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহিলাদের জন্য বিশেষ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাকী দিনগুলোতে মাহফিলে তাফসীর পেশ করবেন আল্লামা ইসহাক আল মাদানী, ড. মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ মোহাম্মদ শাহ ওয়ালী উল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, মুফতী মাওলানা আমীর হামজা, অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী, মাওলানা সাদিকুর রহমান আল আজহারী, মুফতী আলী হাসান উসামা ও শামীম বিন সাঈদী প্রমূখ।