লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি: মৃত্যু ১০
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:২৬:২৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল গতকালও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। তবে ঝড়ো বাতাসের গতি কমে আসায় অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা দাবানল ছড়িয়ে পড়ার গতিও কিছুটা কমাতে পেরেছেন। এর আগের দুই দিনে ঝড়ো বাতাসের কারণে প্রচন্ড বেগে দাবানল ছড়িয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পশ্চিমাঞ্চলে স্যান্টা মনিকা ও মালিবুর মধ্যবর্তী প্যালিসেইডস এলাকা এবং পূর্বে পাসাডেনার কাছে ইটন এলাকার দাবানলকে ইতিমধ্যে শহরটির ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। দাবানলে ইতিমধ্যে সেখানকার প্রায় ৩১ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
প্রাণহানি বেড়ে ১০ : লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির মেডিকেল পরীক্ষক বলেছেন, দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ১০ জনে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার রয়টার্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। দাবানলে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আরও ২ লাখ মানুষকে সতর্কতার আওতায় রাখা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের শেরিফ রবার্ট লুনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। দাবানলের কারণে শুধু ইটন এলাকাতেই চার পাঁচ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের বরাতে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যালিসেইডসের দাবানলে আরও ৫ হাজার ৩০০ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন বলেছেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের দেহাবশেষ শনাক্তকারী দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাবে।
১০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : লস অ্যাঞ্জেলেসে কেনেথ ও ইটন এলাকায় দাবানলে ১০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে অন্য ভবন ও স্থাপনা। এপির খবরে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা গেছে। দাবানল কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে : লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কয়েকটি জায়গায় দাবানল ছড়িয়েছে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে জ্বলন্ত পাহাড়ের ওপর উড়োজাহাজ থেকে পানি ফেলতে শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিবিসির খবরে জানা যায়, এ পর্যন্ত কেনেথ, হার্স্ট, লিডিয়া, ইটন ও প্যালিসাইডস অঞ্চলে দাবানলের আগুন ছড়িয়েছে।
৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পুড়েছে : আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলছে সবকিছু। চারপাশে সাইরেনের শব্দ। ধোঁয়ায় অন্ধকার আকাশে চক্কর দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার। ছুটে চলেছেন লোকজন। সবার চেহারায় অজানা আশঙ্কা। কোথায় যাবেন, জানেন না অনেকে। এ চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে শহরটি। আগুনে এখন পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ লাখ ১১ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দাবানলে এখন পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
ঐতিহাসিক স্থান হুমকিতে: লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন বলেন, ইটন এলাকার দাবানল মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির মাঠ পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এটি এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে এক শতাব্দী আগে এডউইন হাবল মিল্কিওয়ের বাইরে ছায়াপথের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকা প্যাসিফিক প্যালিসেইডসে অনেক তারকার বসবাস। সেখানকার বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ছয়টি অঙ্গরাজ্যের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণের কাজে পাঠানো হচ্ছে।
ভয়াবহ দাবানল মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আছে কানাডার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল মোকাবিলার সক্ষমতাসম্পন্ন উড়োজাহাজ পাঠিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, কানাডার ফায়ার সার্ভিসের ২৫০ জন কর্মীকে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
যেন পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা বলেছেন, দাবানলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত অনেকগুলো এলাকায় পৌঁছানোটা নিরাপদ নয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দাবানলে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির প্রধান আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা রবার্ট লুনা। তিনি বলেন, দাবানলে মৃত মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত পাঁচজনই আছে। তবে মৃত মানুষের এ সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তিত হবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবার্ট লুনা বলেন, ‘…(মনে হচ্ছে) এই এলাকাগুলোয় একটি পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে।’ দাবানল আরও বাড়বে কি না, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবার্ট লুনা বলেন, তিনি প্রার্থনা করছেন, যাতে তেমনটা না হয়। তবে রবার্ট লুনা বলেন, ‘আমি ভালো খবর আশা করি না।
দাবানল নিয়ে চটেছেন ট্রাম্প : লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক বিবাদে জড়ালেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মঙ্গলবার দাবানল শুরুর পর এখন পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করা শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের বিরুদ্ধে তুলেছেন নানা ধরনের ব্যর্থতার অভিযোগ। এসব অভিযোগের একটি, নিউসম পানির অপচয় করছেন। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে গতকাল বলেন, ‘গ্যাভিন নিউজকামের (গভর্নর নিউসম) পদত্যাগ করা উচিত। সব তাঁর ব্যর্থতা!’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ আগুন এটাই বলছে, ২০ জানুয়ারির জন্য আর অপেক্ষার সময় নেই।’ দিনটিতে জো বাইডেনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। ‘এটিকে বাইডেন–নিউজকাম জুটির চরম অক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হিসেবে প্রকাশ পেতে দিন’, বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।