সমর্থন দিন, স্বপ্নের মানবিক দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ : মাগুরায় ডা. শফিকুর রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান মাগুরাবাসীর সমর্থন চেয়ে বলেছেন, আমাদের সমর্থন দিন। আমরা আপনাদের সাথে হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বপ্নের মানবিক দেশ গড়বো।তিনি অঙ্গীকার করে বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মা এবং আহতদের কথা দিচ্ছি, ক্ষমতায় গেলে নিজেরা চাঁদাবাজি করবো না, কাউকে চাঁদাবাজি করতে দিবো না। নিজেরা দখলবাজি করবো না, কাউকে করতে দেবো না। আপনাদের সাথে নিয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার মাগুরা জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ঐতিহাসিক নোমানী ময়দানে বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা আমীর এম বি বাকের।
ডা, শফিকুর রহমান বলেন, আজ থেকে এক বছর আগে এমন একটি কর্মী সম্মেলনের স্বপ্নও দেখিনি আমরা। কারণ সেই সময় এমন একটি সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছিল, মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ কষ্ট পেলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারতো না। ভাল লাগলে হাসতেও পারতো না। একটা ভয়ের সংস্কৃতি বিগত সরকার চালু করেছিল। কেউ তাদের মন্দ কাজের সমালোচনা করলে আস্তে করে জেলে ঢুকিয়ে দিতো।
তিনি বলেন, আজকে শুনি একজন আওয়ামী লীগের নেতা বলেছেন- এখন চালের দাম এতো কেন? তারা তো ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবেন। তারা কী সাড়ে ১৫ বছর খাওয়াতে পেরেছেন? মাঠ থেকে উত্তর আসে- না, না। আপানারা দেখেছেন আপনাদের এলাকার এমপি-মন্ত্রী-সচিব হওয়ার আগে তাদের সহায়-সম্পত্তি কেমন ছিল। ১৫ বছরে খেয়ে দেয়ে তারা কেমন মোটা তাজা হয়েছেন তাও আপনারা দেখেছেন। এই চিত্র শুধু মাগুরাতে নয়। এচিত্র ছিল সারা বাংলাদেশের। কেউ কেউ বলেছেন আমি আমার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। আমার পাওয়ার কিছু নাই। এখন কেবল দেওয়ার পালা। হ্যাঁ তারা দিয়েছেন ছোপ ছোপ রক্ত আর সারি সারি লাশ। এমন কোন জনপদ বাংলাদেশে নেই যে তারা নির্দয়ভাবে হত্যাকা- চালায়নি। এমনকি ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত কাজটি চালিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে গেছেন। দেশ যদি আপনার হয়ে থাকে, দেশকে ও মাটিকে ভালবেসে থাকেন, তাহলে পালালেন কেন? প্রশ্্ন রাখেন ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি ব্রুনাই সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ব্রুনাই সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষের দেশ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ধনি দেশ। সেখানে রাজতন্ত্র হলেও রাজা তার জনগণকে তার অন্তরে ধারণ করেন। এজন্য রাজার কোন নিরাপত্তা লাগে না। সেখানে নাগরিকদের অধিকার চাইতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশেতো অধিকারের জন্য প্রতিদিন মিটিং মিছিল করতে হয়। কিন্তু সেখানে না চাইতেই অধিকার পেয়ে যায় নাগরিকরা। আপনারা কি সেরকম দেশ চান? মাঠ থেকে জবাব আসে- ‘চাই’। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একটি সুন্দর মানবিক দেশ গঠনের জন্য লড়াই করছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ কোরআনের দ্বারা পরিচালিত হয় বলে ব্রুনাইতে রাজার বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মী লাগে না। বছরে একটি খুনও হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের দুজন দায়িত্বাশীল মন্ত্রী ছিলেন। কেউ বলতে পারবে না যে, তারা দুই টাকার দুর্নীতি করেছেন। তারা সবার অধিকার সবার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমরা যদি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত হই, আগামিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সমস্ত ইসলামী দল, দেশপ্রেমিক দল ও মানবিক দলকে সাথে নিয়ে সরকার পরিচালনার সুযোগ পাই, ইনশাআল্লাহ একটি মানবিক দেশ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবো। সেই দেশটা ইনশাআল্লাহ এমন হবে, এই দেশে একজন মা তিনি ঘরের ভেতর থাকবেন নিরাপদ, রাস্তায় বের হলে তিনি হবেন সম্মানিত, কাজের ময়দানে তিনি হবে মর্যাদাপ্রাপ্ত।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের মায়েরা রসূলে করিম (সা:) এর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন, তারা মহান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা ব্যবসা করেছেন এবং সমাজ পরিচালনায় ভুমিকা রেখেছেন। ডা, শফিকুর রহমান বলেন, কোন দল নয়, ধর্ম নয় দেশ আমাদের সবার। এই নীতিকে ভিত্তি করে যার যার অধিকার তা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সবাইকে নিয়ে আমরা দেশ গড়বো। সবার অধিকার সমান থাকবে।
তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করার আশ^াস দিয়ে বলেন, আমরা এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো যাতে কাউকে বেকার থাকতে না হয়। স্কুল কলেজ মাদরাসা থেকে বের হয়ে একটা চাকরির জন্য এ ঘরে ঐ ঘরে ঘুরতে না হয়। আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে সবার ন্যায্য স্বাধীনতা থাকবে। আমরা সীমাহীন অন্যায্য স্বাধীনতায় বিশ^াসী নই। যে স্বাধীনতা অপরের চরিত্র হনন করে। মিথ্যা গুজব ছড়ায়। একজনের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ায়। আমরা এরকম অধিকার দিতেও চাই না, দেখতেও চাই না।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই যেখনে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে বলবে তুমি কালো, তুমি সাদা। আমরা সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। বিচাররের অঙ্গনে আজকে মানুষ বিচার পায় না। ঘুষের রমরমা বাণিজ্য হয়। বিচারপতিরা ঘুষ খায়। বলবেন তার কোন প্রমাণ আছে? হাজার প্রমাণ আছে। সবশেষ প্রমাণ হচ্ছে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আমরা এমন বিচার নিশ্চিত করতে চাই যেখানে কোন বিচারক রাষ্ট্রের কোন কর্মকর্তা, কোন কর্মচারী ঘুষের জন্য হাত বাড়ানোর দু:সাহস দেখাবে না। যদি কেউ হাত বাড়ায় তাহলে তার সেই হাত ভেঙ্গে অবস করে দেওয়া হবে। ডা. শফিকুর রহমান ঘুষ আর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের কথা জানিয়ে বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতি দুটি-ই সমাজের ক্যান্সার। এই ক্যান্সার দূর করতে না পারলে স্বপ্নের বাংলাদেশ কেউ গড়তে পারবে না।
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করে জামায়াতের আমীর বলেন, ২০০৯ সালে যে খুন গুম আর ধর্ষণের রাজনীতির শুরু হয়েছিল সেই রাজনীতির কবর আমরা রচনা করবো ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের সন্তানেরা রাজপথে স্লোগান দিয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা বৈষম্য চাই না, ন্যায় বিচার চাই। আমরা শহীদদের আত্মাকে কথা দিচ্ছি, আল্লাহকে কথা দিচ্ছি, শহীদদের বেঁচে থাকা আপনজনদের কথা দিচ্ছি, আহত পঙ্গু ভাইবোনদের কথা দিচ্ছি, তাদের স্বপ্নের সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য যদি অপেক্ষা করতে হয় তাতে রাজি আছি। কিন্তু লড়াই ছেড়ে দিবো না। এই লড়াই আমাদের অব্যাহত থাকবেই। এই লড়াইয়ে এবার আমরা জনগণকে পাশে পাবো। ইতোমধ্যে জনগণ জানান দিয়েছে যে, আমরা চাঁদাবাজমুক্ত, দখলদার মুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, ন্যায় এবং সাম্যের একটি বাংলাদেশ চাই। তিনি বলেন এমন বাংলাদেশ গঠনের লড়াই শেষ হয়নি। সামনে আরও লড়াই করতে হবে। এজন্য মাগুরাবাসীকে পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ডা. শফিকুর রহমান, স্লোগান তোলেন “আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”। মাঠ থেকে তার সঙ্গে সুর মিলান লাখো কণ্ঠ।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের জানাচ্ছি অতীতে আমরা কখনো চাঁদাবাজি করি নাই। এখন করছি না। ভবিষৎতেও আমরা করবো না। যদি আল্লাহ আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেন কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেবো না। আমরা দখলবাজি চালাই না, ভবিষৎতে কাউকে দখলবাজি চালাতে দেওয়া হবে না। আমরা মানুষকে ভিন্ন চোখে দেখি না। এসময় তিনি মাগুরার বৃদ্ধা কিরণবালা এবং কক্সবাজারের বৌদ্ধ ধর্মের নি:স্ব ব্যক্তিকে নিরবে সহায়তা করার উদাহরণ দেন। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন আমীরে জামায়াত।
জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সাঈদ আহমদ বাচ্চুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মো. মোবারক হোসেন, যশোর- কুষ্টিয়া অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য আবদুল মতিন, ড আলমগীর বিশ^াস, মাওলানা আজিজুর রহমান ও শহীদ মিঠু বিশ^াস মারুফের বাবা মো. শাহজাহান।
এদিন দুপুরে শহরের দরি মাগুরাস্থ আল আমীন কমপ্লেক্সে মহিলা রুকন সম্মেলন ও অমুসলীম নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আমীরে জামায়াত। বিকেলে জেলার এলজিইডি সম্মেলন কক্ষে পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডাক্তার শফিকুর রহমান।