সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলালো বিএসএফ, আতঙ্কে বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: বাংলাদেশ আর ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে কাচের বোতল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের দিকে স্থানীয় গ্রামবাসী এবং বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বলছে, বিএসএফ সদস্যরাই ওই কাচের বোতল ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে।বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে পাওয়া কিছু ছবিতে দেখা গেছে ওই কাচের বোতলগুলো আসলে মদের খালি বোতল। স্থানীয় মানুষ বলছেন, ওই খালি বোতলে কী না কী রেখে দিয়েছে বিএসএফ! তারা আতঙ্কে আছেন এই বোতল ঝোলানোর ঘটনায়।
স্থানীয় সূত্রগুলি থেকে জানা যাচ্ছে যে গত বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ শিবির থেকে কয়েকজন সীমান্তরক্ষী কাঁটাতারের বেড়ায় ওই খালি কাচের বোতলগুলি ঝুলিয়ে দিয়ে যায়।
কেন কাঁটাতারের বেড়ায় বোতল?
শুধু যে পাটগ্রাম সীমান্তে নতুন করে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়ায় খালি বোতল রয়েছে, তা নয়। বিএসএফ কর্মকর্তারা বলছেন অনেক সীমান্ত বেড়াতেই কাচের বোতল ঝোলানো থাকে।দক্ষিণ বঙ্গে পেট্রাপোল সীমান্ত চেকপোস্টের কাছেই এক জায়গায় বিএসএফ যেখানে একসারির বেড়া বা সিঙ্গল রো ফেন্সিং দিয়ে রেখেছে, সেখানে গিয়েও বিবিসির প্রতিনিধি খালি কাচের বোতল দেখেছেন কয়েক জায়গায়।
এক বিএসএফ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কেউ বেড়া কাটতে চাইলে অথবা নাড়াচাড়া দিলে কাচের বোতলে শব্দ হবে বা সেটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে। সেই শব্দে কাছাকাছি থাকা বিএসএফ প্রহরী সজাগ হয়ে যেতে পারবেন-সে জন্যই এরকম একটা ব্যবস্থা। দিনের বেলার থেকেও রাতের অন্ধকারে প্রহরীদের সজাগ করার জন্য বেশ কার্যকর এটা।
তিনি বলেন, এটা পাকাপাকি ব্যবস্থা নয় কখনই। স্থানীয়ভাবে এরকম নানা ব্যবস্থা করে নিতে হয় সীমান্তে – যেখানে যেরকম প্রয়োজন, সেখানে সেরকম ব্যবস্থা করতে হয়, নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন ওই বিএসএফ কর্মকর্তা।
৫১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আলদীনকে উদ্ধৃত করে দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে যে, এটি নতুন কোনও স্থাপনা নয়। বেড়াটির সুরক্ষার জন্যই তারা বোতল ঝুলিয়েছে। যদি কেউ রাতের আঁধারে বেড়া তুলে নিয়ে যায় সে জন্য তারা (বিএসএফ) শূন্যরেখায় বেড়া দিয়ে নিজেরাই দুশ্চিন্তায় আছে। এজন্য তারা এই প্রটেকশনটি ব্যবহার করেছে
বিএসএফের নানা ‘উদ্ভাবন’ :
পেট্রাপোলের যে মূল সীমান্ত ফটক, তারপাশেই বাংলাদেশ আর ভারতের সীমান্তের মাঝে, ভারতের অংশে রয়েছে একটি কচুরিপানা ভরা খাল। তার পাড়ে লাগানো হয়েছে সিঙ্গল রো ফেন্সিং বা এক-সারি বেড়া। বাঁশের খুঁটিতে সাধারণ মানুষ যেমন কাঁটাতার বেঁধে বেড়া দেন, এটা অনেকটা সেরকম। তবে এই অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে, স্থানীয় প্রশাসন খুঁটি পুঁতে দিয়ে জায়গা চিহ্নিত করে গেছে।এবার সিঙ্গল রো ফেন্সিং বসলে সেটা হবে স্থায়ী ব্যবস্থা- সিমেন্ট ঢালাই করে খুঁটি পুঁতে একসারির বেড়া দেওয়া হবে এই জায়গায়। এই বেড়ার গায়ে, কিছুটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে দুই ধরনের অ্যালার্ম ব্যবস্থা।
কাচের বোতল ভেঙে গিয়ে তার শব্দে যেমন বিএসএফ প্রহরীরা সতর্ক হতে পারেন, তেমনই পেট্রাপোলের এই সীমান্তের বেড়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় পা পড়লেই বেজে উঠছে সাইরেন। বিএসএফের এক কর্মকর্তা বলেন, এটার নাম ‘ইন্ট্রুডার অ্যালার্ম’। আরেক ধরনের অ্যালার্ম রয়েছে, যার নাম ‘ট্রিপ ফ্লেয়ার’। কেউ বেড়া ছুঁয়ে ফেললেই তুবড়ির মতো আলো জ্বলে উঠবে, সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে ওই জায়গাটি। এই দুই ধরনের অ্যালার্মই প্রত্যক্ষ করেছেন বিবিসির প্রতিনিধি।
এরকম নানা এলাকা অনুযায়ী নানা ধরনের ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে বিএসএফ। এছাড়াও বড়বড় আলো এবং অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে সেখানে। এই ক্যামেরাগুলির ছবি সরাসরি চলে যায় কন্ট্রোল রুমে। তার ওপরে নজর রাখেন একজন অপারেটর,” জানিয়েছেন বিএসএফের ওই অফিসার।
ওই কন্ট্রোল রুমের দেওয়ালে বড় বড় মনিটরে ১৪-১৫টি সিসিটিভির ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। সীমান্তের পাশ দিয়ে কোনও মানুষ যেতে দেখলেই মনিটরের ছবিতে লাল বাক্সে তাকে চিহ্নিত করা হয়ে যাচ্ছে। আবার কাঁটাতারের বেড়ার কাছে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে হলুদ রেখা টানা। ওই রেখার কাছে কোনও মানুষকে দেখা গেলেই সতর্ক করবে মনিটরিং সিস্টেম। এছাড়াও রাতের অন্ধকারে নজরদারির জন্য নাইট ভিশন দূরবীন এবং থার্মাল ইমেজ ধরা পড়ে, এমন ক্যামেরাও আছে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায়।