নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু ঝুঁকি ৭১ শতাংশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:৪০:১৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : শীত মানেই খেজুরের রস খাওয়ার মৌসুম। খেজুরের কাঁচা রস খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন- এটি এখন কমবেশি সবাই জানেন। তবে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাসের ভয়াবহতা দেশের সাধারণ নাগরিকদের অনেকেরই অজানা। কাঁচা খেজুরের রসে শুধু নিপাহ ভাইরাসই নয়, আরও অনেক ভয়াবহ ভাইরাস থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।
একটি সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, কাঁচা খেজুরের রস পানে শুধু নিপাহ ভাইরাসই নয়, এর চেয়ে ভয়ঙ্কর ভাইরাসেও আক্রান্ত হতে পারেন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুকি প্রায় ৭১ শতাংশ। আক্রান্ত বাকি ২০ শতাংশ সুস্থ হলেও তাদের কোনো না কোনোভাবে শারীরিক ক্ষতি হয়।
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, আমাদের সচেতনতাই পারে এ ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে। তাই সবাইকে বলব খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে। এ বছর নিপাহ আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, না, আমরা এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কোনো রোগী পাইনি। তবে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলে উপসর্গ নিয়ে অনেকেই পরীক্ষার জন্য আসেন।
নিপাহ ভাইরাস কী :
ভাইরোলজির সংজ্ঞা অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস একটা প্যারামিক্সো ভাইরাস। এনভেলপড ভাইরাস অর্থাৎ কোভিডের মতোই এর চারদিকে আবরণ থাকে, যেটা তৈলাক্ত।আইইডিসিআর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। আর বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে, মেহেরপুর জেলায়।
কীভাবে ছড়ায় :
আইইডিসিআর তথ্য মতে, প্রাকৃতিকভাবেই বাঁদুড়ের দেহে নিপাহ ভাইরাস থাকে। কিন্তু তারা নিজেরা আক্রান্ত হয় না। এই ভাইরাস কোনোভাবে মানুষের মধ্যে এলে মানুষ আক্রান্ত হয়। বাঁদুড়ের লালা ও প্রস্রাব থেকে ভাইরাস আসে খেজুরের কাঁচা রসে, সেখান থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস। খেজুরের কাঁচা রস ছাড়াও কোনো ফল যদি বাঁদুড় খায় সেই আধা খাওয়া ফল মানুষ খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বাঁদুড় ছাড়াও কোনো পাখি বা প্রাণীর আধা খাওয়া ফলও খাওয়া উচিত নয়।
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ :
প্রচ- জ্বর, তীব্র মাথা ব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, আবোল-তাবোল কথা বলা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে কাশির লক্ষণ পাওয়া গেছে। কাশিসহ যে লক্ষণ নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণে, সেটা বাংলাদেশে নতুন। এর মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। খেজুরের গুড় খেলে বা রস ফুটিয়ে খেলে নিপাহ ভাইরাস থাকে কি?
আইইডিসিআরের স্বাস্থ্য বার্তায় বলা হয়েছে, ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিপাহ ভাইরাস নষ্ট হয়। খেজুরের গুড় তৈরির সময় অনেক বেশি তাপমাত্রায় রস জ্বাল দিতে হয়, তাতে ভাইরাস থাকার কোনো আশঙ্কা থাকে না। খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েসও নিরাপদ। তবে সঠিক তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে খেতে হবে।