আজ কমলের জন্মদিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২:৪২ অপরাহ্ন
সালেহ আহমদ খসরু :যে কমল ফুটেছিল ১৯শে জানুয়ারী ১৯৩৬ সালে বগুড়া জেলার বাগবাড়ি – রাঙিয়ে দিয়েছিল এই ধরনী তাঁর আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। এ যেন নতুন দিন নবজাগরণের ঊষালগ্নে এসেছে ২০২৫। কমল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাক নাম, এর অর্থ পদ্ম। কবি’র ভাষায় যেখানে পদ্ম ফুলের মাথায় খেলা করে ভ্রমর আর আর সাপ-সেই দেশ বাংলাদেশ। বিগত সতেরো বছর ধরে কেবল মনে হতো এই বুঝি কামড়ে দিলো বা গিলে ফেলতে চায় অজগর। তখনই আবার ফুল আর ভ্রমরের খেলায় আশাবাদী হয় জাতি, তেমনই স্বপ্নের ভোরে আজ কমলের জন্মদিন।
তবে আজ সেই ভয়ানক পরিস্থিতি পাল্টেছে এবং আশাবাদী জাতি নতুন দিন চায়, নিশ্চিন্ত রাত্রিতে বাড়ি ফিরতে চায়। তেমন মাহেন্দ্রক্ষণে একজন জিয়া আজ অবধারিত এক দফা – সেই দফা কী? উত্তর অতি সাধারণ – সততা নিষ্ঠা পরিশ্রমী পুরো দেশ নিয়ে চিন্তক এবং সীমানা পেরিয়ে মুসলিম বিশ্বে আলোকপাত করা তথা ব্যক্তির বাইরে গিয়ে এক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক। যদি কেউ এমন হতে পারেন তবেই এগুবে দেশ, যেভাবে মাত্র সাড়ে তিন বছর বা পুরো সময় আমলে নিলে পাঁচ বছরের মাথায় যে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি প্রমাণ করে দেশের চিত্র বদলাতে দফা একটা – প্রেসিডেন্ট জিয়া।
আজ সেই আলোর ফেরিওয়ালা- বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর ৮৯তম জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। কিছু কথার স্মরণ ও লালন করার তাগিদে স্মৃতি তর্পণ করে যদি বলি-এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মাওলানা ভাসানীর পর সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে যিনি সর্বোচ্চ আলোচিত তিনি ‘কমল’ এবং এই অভুতপুর্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ দেশের মানুষের প্রিয়তম নামটি হল- ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া’ যার ডাক নাম কমল! দেশের দু’টি ক্রান্তিলগ্নে দু’বারই সাহস বিচক্ষণতা ও ন্যায়নিষ্ঠ কর্মদক্ষতায় বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন যে বীর, তিনি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে যে ১১জন সেক্টর কমান্ডারের নাম ছিল পাক হানাদারদের আতঙ্ক তাঁর প্রথমটিই মেজর জিয়া। দুটি ব্রিগেড গঠন হয়েছিল পুরো যুদ্ধে তার প্রথমটির নেতৃত্বও এই কমলের হাতেই ছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্রিগেড গঠন হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। মুক্তিযুদ্ধে গড়ে উঠা ‘জেড ফোর্স’ এর বীরত্বের কাহিনী মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল ৭১’র দিনগুলোতে এবং তার প্রভাবে গোটা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণ সঞ্চারিত করেছিল। কালুরঘাট, শাহবাজপুর, যশোর ও কানাইঘাট-জকিগঞ্জ, কমলগঞ্জ সীমান্তে ও যুদ্ধের ময়দানে প্রমোশন পাওয়া লেঃ কর্ণেল জিয়া যে অকুতোভয় দুঃসাহসী কদমে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছেন তার স্বাক্ষর বাংলাদেশের বিজয় পতাকায় পতপত করে উড়ছে।
কানাইঘাট যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের এক গভীর রাত্রিতে আলাপচারিতায় সঙ্গীয় কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রমকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – “হাফিজ, পাকিস্তানিতো তাড়ালাম কিন্তু এখন না ভারতীয়দের তাড়াতে হয়”! কি প্রখর দুরদৃষ্ট ছিলেন এই সমরনায়ক একবার ভেবে দেখুন! দেশের সীমান্ত হত্যা, হাট ও উন্নয়নের নামে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপে তথা সরকারের উপর নজরদারি এবং গুম-খুনের যে মহড়া চলেছিল তা থেকে নিস্কৃতি পেতে জনতার লড়াই জয়ী হয়েছে। যদিও ভ্রুক্ষেপহীন ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে যারপরনাই সহযোগিতা দিয়ে ভারত এ দেশের দেশপ্রেমিক জনতার মনে এই ধারণা দিতে চাইছিল যে, হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ কল্পনা করা যেন গোনাহখাতা খুলে দেয়া। সেইখান হতে আজ মুক্ত স্বদেশ, কৃতজ্ঞতা সেই সব বীরের প্রতি যাদের সতেরো বছর এবং সর্বশেষ ভাই আবু সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ তানভীর রিয়া তনিমা তোরাব রুদ্র সেন সহ হাজারো শহীদ যার জন্য আজ পত্রিকার পাতায় লিখতে আর মানা নেই, কিছু সম্পাদক বলবেন না – খসরু ভাই আমি ছাপতে পারছি না, দুঃখিত। তাই মানুষের তিরস্কারের কেন্দ্রবিন্দু ঐ আগ্রাসী শক্তি ও তাবেদার সরকারের দিকেই নিবদ্ধ ছিল এবং আজও আছে। তোরা যে যা বলিস ভাই হাসিনা ও তার ঠিকানা বিলুপ্তিতে দেশের মানুষ একসঙ্গে আছে যেভাবে ছিল সতেরো বছর। মনে পড়ে সেই রাত্রির ঘোষণা I Major Zia declare the independence… এবং ঐতিহাসিক ০৭ নভেম্বরের বিপ্লবী সকাল যা এখন পরিস্ফুটিত সত্য, যেটি বাস্তবায়নে জাতি মুখিয়ে আছে। আর এজন্যই বলতে দ্বিধা নেই যে, জিয়াউর রহমান একাধারে সমরনায়ক ও ধীমান রাস্ট্রনায়ক ছিলেন বিধায় আজকের বাংলাদেশে কোনো দফাটফা নয়, কেবল একজন সৎ নির্মোহ প্রেসিডেন্ট জিয়া অনিবার্য প্রাসঙ্গিকতা।
রাজনীতিবিদ জিয়া বাংলাদেশে মৃত গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ কথা কিছু মানুষ মানতে চায় না! তারা শোর মাচায় যে, তিনি সামরিক ছাউনি হতে এসেছেন! নানা তীর্যক মন্তব্য! এবং এখানেই তিনি অন্যান্য ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতা হতে ভিন্নতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন কারণ উর্দি পরা মানুষ হয়েও একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে কার্পণ্য না করে সেই-সময়কার মৃত আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া বাকশাল বাতিল করে! কতোখানি গনতান্ত্রিক হৃদয় হলে দেশের প্রথম স্বৈরাচারের শুরু যে রাজনীতি দিয়ে তাকেও ফিরে আসতে সুযোগ করে দেন। যারা তীব্র ও অনাহুত ভাষায় এই ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক সৎ প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেন তাদের কাছে বিনীত জিজ্ঞাসা – সেদিন কি আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠন করেননি তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবর রহমান? যেহেতু এটি তিনি করেছিলেন সেহেতু তিনি এই একদলীয় শাসনের দুঃস্বপ্ন অধ্যায়ের দায়ভার এড়াতে পারেননা! বা কোন রাজনৈতিক মহিরুহ এটি অস্বীকার যদি করেন তবে তাকেও একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে ইতিহাস এবং আজ হয়েছেও তাই। একেবারে লেনিনের মুর্তির মতো খানখান করে ধূলিস্যাৎ হয়েছে সঙ্গে মর্মর পাথরে গড়া একেকটি বিষাদ স্তম্ভ যা দেখে মানুষ বলতো, কবে বিলীন হবে এই পাথর আমার বুক হতে।
ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনা! হয়তো দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না বা অন্য কেউ অপেক্ষায় থাকি তার অমোঘ বিধানের!
অত্যন্ত অল্পসময় রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে তিনি যে বিশাল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তার কতোগুলো দিক আলোচনা না করলে অনুধাবন করা যাবেনা যে, তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ সর্বোচ্চ কেন? লাভজনক স্থানের শিখরে থেকেও সৎ-সাদামাটা জীবন, কর্মনিষ্ঠ দিনপঞ্জি, প্রতিবেশী রাস্ট্র’র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় সীমান্ত রক্ষার চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজধানী কেন্দ্রিক রাজনীতিকে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া, মজা পুকুরে মাছ চাষ, খাল খনন, পতিত জমি চাষের আওতায় এনে ধানের বাম্পার ফলন ও রফতানি তথা পোশাক শিল্প উৎপত্তি,স্থানীয় সরকার গঠনকল্পে শেকড় পর্যায়ে গ্রাম সরকার কার্যকর সহ নানান অবকাঠামো উন্নয়ন কল্পে ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে প্রায় প্রতিদিন পায়ে হেটে তদারকি করা!
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জিয়া যেভাবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তা শুধু দেশ ও জাতি হিসেবে গৌরবের পালকই সংযুক্ত করেনি বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব তাঁর হাত দিয়েই শুরু হয়! এবং এখানে বলে রাখা জরুরী এই শ্রমবাজার বিশেষভাবে উন্মুক্ত হয়েছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত মুহুর্ত কেন্দ্র করে-একদল সন্ত্রাসী ২০শে নভেম্বর হতে ০৪ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে মসজিদ-আল-হারাম দখল করে ঘোষণা দেয় যে, তাদের নেতা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ খাতানিই ইমাম মেহদি এবং তাকে মুসলমানগন মেনে নিতে হবে! সেই চরম ক্রান্তিলগ্নে ফ্রান্স, পাকিস্তান আর্মির কমান্ডো বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ আর্মির স্পেশাল কমান্ডো অভিযান চালিয়ে আল্লাহপাক এর রহমতে পবিত্র এই স্থান উন্মুক্ত করে! তখন এই যৌথবাহিনীতে আমাদের কমান্ডো বিশেষ অবদান রাখতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরাসরি ভুমিকা রাখেন! যার বদৌলতে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ খালিদ বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর উপর মুগ্ধ হয়ে বলেন-কি চান আপনি বা কতো অর্থ সাহায্য চাই আপনার দেশের জন্য! এমন প্রস্তাবের উত্তরে ধীমান ও আত্মমর্যাদায় বলীয়ান প্রেসিডেন্ট জবাব দেন – না, আমি কোনো অর্থ সাহায্য চাইনা! আমি আপনার দেশে আমার দেশের মানুষের উন্মুক্ত শ্রমবাজার চাই, যেখানে আমাদের নাগরিকদের শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন হবে এবং সেই অর্থ আমার দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করবে! ব্যস শুরু হল রেমিট্যান্স এর বিপুল প্রবাহ, যে ধারা আজও বহমান।
ওপেক(ঙচঊঈ) যখন পানির দামে তেল বিক্রি করছে সারা দুনিয়া জুড়ে তখন এই ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক মুসলিম বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো তার এই খনিজ সম্পদ যথাযথ কাজে লাগিয়ে আকাশচুম্বী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারে! যেই পরামর্শ সেই কাজ, তেলের দাম বাড়তে থাকলো আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করা আরম্ভ করলো।
দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পারস্পরিক অবিশ্বাস যখন তীব্র এবং শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তান পাকিস্তান ও ভারতে রহংঁৎমবহপু যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তথা সামরিকভাবে দুর্বল দেশ ভুটান নেপালকে যাতে কেউ আগ্রাসী লক্ষ্যের বস্তুতে পরিণত করতে না পারে বরং বিশ্বাস ও পারস্পরিক মর্যাদায় একে অপরের পরিপুরক হয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্ব মানচিত্রে বুক উঁচিয়ে দাড়াতে সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে তিনি ‘সার্ক’ গঠন করেন এবং ভারতকে আমলে নিয়ে যে এটি এগিয়ে নিতে হবে তা অনুধাবন করে মোরারজী দেশাই সরকার এর সাথে মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াই ফারাক্কার পানি যার যার হিস্যার অনুপাতে বন্টন করতে সফল হন! অথচ বিগত সতেরো বছর তথাকথিত সুনিবিড় বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চল হয় মরুদ্যান না হয় প্লাবন, কেউ কি ভাবি এ কিসের আলামত ছিল!!
১৯৮০ সনের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজে উদ্যোগী হয়ে সফর করা মাত্র দুই দেশের দামামা স্থীমিত হতে আরম্ভ করে। সম্ভবতঃ পাশ্চাত্যের পরাশক্তির ধারকগণ তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আর যাইহোক তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক কেমন করে বিশ্বনেতাদের সারিতে আসে তা রোধ করতে হবে! এরপরই চুড়ান্ত নীলনকশা তৈরী করে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী! দেশের চিন্তাশীল ও সাদামাটা মানুষসহ আমিও শতভাগ নিশ্চিত প্রতিবেশী একটি রাস্ট্রের সহায়তা নিয়ে তারা ঘৃণ্য পরিকল্পনা করে! সেই ষড়যন্ত্রের কারণে ঘাতকের বুলেটে ৩০শে মে ১৯৮১সনে নির্মমভাবে প্রাণ হারান। শহীদ হন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। অকাল প্রয়ানে তখন দেশ স্তব্ধ, জাতি হতবিহ্বল, বিমর্ষ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ফুঁসে ওঠে! জ্বালিয়ে দিতে চায় সবকিছু, কিন্তু হন্তক অচেনা বিধায় ইতস্তত জাতি মুষড়ে পড়েছিল সেদিন। কিন্তু সেই আবেগ এতো বেগে বহমান হয়েছিল যে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়া’র জানাজায় যতো লোক সমাগম হয়েছে তা বিশ্বে স্মরণকালের বৃহত্তর বলেই আজও আলোচিত।
একজন সমরনায়ক কি অবলীলায় হয়ে উঠেন সফল নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক। তিনি দেশের বদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ যখন উন্মুক্ত করেন তখন রাঙামাটি তথা পার্বত্য অশান্তি নিয়ন্ত্রণ করতে দেশের মানুষকে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সম্পৃক্ত করে অশান্ত পাহাড়কে স্থিতিশীল করে তুলেন, যশোহরের সীমান্ত এলাকা শার্ষায় খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধন করতে গিয়ে বিবিসিকে যখন বলেন – “আমার কোদালের আওয়াজ যেন দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে” তখন হতেই মানুষ আস্থা ফিরে পায় যে বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন! কিন্তু ঘাপটি মারা কায়েমি স্বার্থবাদী ও হায়েনা গোষ্ঠি বুঝতে পারে এ জিয়া হারবার নয়, তাঁকে হারানো অসম্ভব। অতঃপর একের পর এক ষড়যন্ত্র করে দেশ নিয়ে যাওয়া হয় পিন্ডি হতে উদ্ধার পাওয়া দিল্লির দরবারে এবং তারপর শুরু হয় জাতির নির্মোহ লড়াই – বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে মাটি। আজ মাটি রক্ষা পেলেও মানুষের মুক্তির লড়াই চলমান এবং সেই আবারও বলছি- একজন প্রেসিডেন্ট জিয়া অনিবার্য এক দফা।
সাদামাটা অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়া যোদ্ধা সৎ বিচক্ষণ সাহসী ধীমান দেশপ্রেমিক স্বজনপ্রীতির উর্ধে ও দৃঢ়চেতা ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়ক সম্পর্কে এতো ছোট ক্যানভাসে চিত্র আঁকা অসম্ভবই নয় বরং তার কর্মের প্রতি যথার্থ সম্ভ্রম জানানো দুঃসাধ্য!
আজ স্মরণ করি সেই তুর্য বান- ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ এবং সেই অমোঘ বাণীর চেয়ে বড় কোন ডাক এ জাতি আর শুনেনি! প্রাণাধিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে সাদামাটা এ জাতি বারংবার জানান দেয়- প্রেসিডেন্ট জিয়া লও সালাম। মহান স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সবসময় বাংলাদেশে অনিবার্য ও প্রাসঙ্গিক যতদিন না জাতি একসঙ্গে গেয়ে উঠবে – ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ এটি বুকে ধারণ করলে দেশ এগুবে, জাতি হাসবে।
আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, আল্লাহপাক এই রাষ্ট্রনায়ককে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী ও প্রাবন্ধিক।