অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:০৪:২৫ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: জলের উপর কিচিরমিচির ও ঝাঁক বেঁধে নীল আকাশে ওড়ে বেড়ানো হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর বাইক্কা বিল। শুধুমাত্র অভয়াশ্রমের মৎস্য ও জলে নেমে আসা শতাধিক প্রজাতির পাখির কম্পনে বিলের সৌন্দর্যকে অন্য জেলা থেকে ফারাক করেছে। এরকম সূরের ঝঙ্কার সিলেট বিভাগের আর কোথাও কর্ণপাত হয়না। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর অধ্যুষিত বাইক্কা বিল। এ বিলটি যেন পাখি আর মাছের স্বর্গরাজ্য। বিলে সাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা এসব অতিথিদের দেখা মেলে পৌষ আর মাঘ মাসে। এ সব দৃশ্য দেখতে রোজ বিকেলে প্রতিদিন ছুটে আসছেন দেশী বিদেশী হাজারো পর্যটক।
হাইল হাওরের পূর্বদিকের প্রায় ১শ হেক্টর আয়তনের জলাভূমি নিয়ে বাইক্কা বিল অবস্থিত। ২০০৩ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় এই বিলটিকে মৎস্য সম্পদের একটি অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন থেকে শুরু হয় অতিথি পাখির আগমন। ২০১১ সালের এক গবেষণায় বাইক্কা বিলে ২০৩টি প্রকার পাখি শনাক্ত করা হয়। বিলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় মৎস্য বৃদ্ধির কারণে পাখির সংখ্যা প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বিদেশী সংস্থা ও পাখি গবেষকরা প্রতি বছর এসে পাখির পরিসংখ্যান করে যায়।
ভিনদেশি পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাখিরা হলো, শঙ্খচিল, ভুবনচিল, পালাসীকুড়া, সরালি, মরচেরং, ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যঞ্জা হাঁস, পানকৌড়ি, রাঙ্গাবক, কানিবক, গোবক, ধলাবক, ধুপনিবক পালাসীকুড়া ঈসল, দলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, গেওয়ালা বাটান, মেটে মাথা চিটি, কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতিসরালী, রাজসরালীসহ ইত্যাদি।
যুক্তরাজ্য থেকে বাইক্কায় আগত এক পাখি বিশেষজ্ঞ বলেন, বাইক্কায় শীতের মুহুর্ত খুবই চমৎকার। বিদেশী পাখির কিচিরমিচিরে প্রকম্পিত হয় পুরো বিলটি। এতে মনটা ভরে যায়। তিনি বলেন, পাখির সংখ্যা বাড়াতে পাখি ও মাছের সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের পক্ষ থেকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।
বাইক্কা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি নামের একটি মৎস্যজীবি সংগঠন। সৌন্দর্য্য রক্ষায় বিল খননসহ বিলের আয়তন বৃদ্ধির দাবিও উঠেছে। মাছের জন্য বিখ্যাত বাইক্কা বিলে অবৈধভাবে পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম বন্ধ করা যাচ্ছে না। অভয়াশ্রম থেকে রাতের আঁধারে নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে মাছ। মাছ আর পাখি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এগিয়ে এলে বিদেশী পাখি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন পর্যটকরা।