চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া : ৮৫ দেশে ২৪ কোটি শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:০৮:৫৪ অপরাহ্ন
তাপপ্রবাহে বাংলাদেশে সাড়ে ৩ কোটি শিশুর ক্ষতি
জালালাবাদ রিপোর্ট: গত বছর (২০২৪ সাল) চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে ৮৫টি দেশে স্কুলগামী প্রায় ২৪ কোটি ২০ লাখ শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে। এ সংখ্যা দেশগুলোর স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রতি ৭ জনে প্রায় একজন। আর ক্ষতির শিকার হওয়া এ শিশুদের সাড়ে ৩ কোটিই বাংলাদেশের। আগামী বছরগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের এটি (স্কুলশিশুদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটা) উপেক্ষিত বিষয়গুলোর একটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার যে বিষয়গুলো স্কুলশিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হলো তাপপ্রবাহ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল সতর্ক করে বলেন, চরম আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ‘অধিকতর ঝুঁকিতে’ আছে শিশুরা।
ক্যাথেরিন বলেন, শিশুদের শরীর বয়স্কদের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয় ও ধীরগতিতে ঠান্ডা হয়। যেসব শ্রেণিকক্ষে প্রচন্ড গরমে কোনো স্বস্তির ব্যবস্থা নেই, সেখানে শিশুরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। আবার যদি স্কুলে আসা-যাওয়ার রাস্তা ডুবে যায় বা পানিতে স্কুল প্লাবিত হয়ে, তাতেও তারা ক্লাসে যেতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দশকের পর দশক জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মানুষের নানা রকম কর্মকান্ড এই পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলেছে ও আবহাওয়ার রূপ বদলে দিয়েছে।
গত বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো এটি সাময়িকভাবে হলেও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের প্রান্তসীমা অতিক্রম করেছে। আবহাওয়ার এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে আগের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও গ্রীষ্মকালে বেশি শুষ্কতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা ছাড়া বাড়ছে তাপপ্রবাহ ও ঝড়। ফলে লোকজন আরও বেশি দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়ছে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে গত বছর ২৪ কোটির বেশি স্কুলশিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হওয়ার যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, সেটি একটি রক্ষণশীল অনুমান। কেননা এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রাপ্তিতে ঘাটতি ছিল।
সহজলভ্য যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, চরম আবহাওয়ার প্রভাবে ২০২৪ সালে দেশগুলোতে কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় ক্লাস স্থগিত রাখতে হয়, ছুটি বাড়াতে হয়, স্কুল খোলা বিলম্বিত হয়, পাঠদানের সূচি বদলায়, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনসে শুধু এপ্রিল মাসেই ১১ কোটি ৮০ লাখ শিশুসহ ওই বছর অন্তত ১৭ কোটি ১০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিপাইনে শিশুদের হাইপারথার্মিয়ায় (শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, যা জ্বর বা হিটস্ট্রোকের মতো অসুস্থতা কারণ হতে পারে) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণব্যবস্থার বাইরে থাকা হাজারো স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তাপমাত্রার সঙ্গে বেড়েছে ঝুঁকিও :
অনেক দেশে স্কুলবর্ষ শুরুর মাস সেপ্টেম্বরও চরম আবহাওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় গত বছর। ওই মাসে ১৮টি দেশের স্কুলগুলোয় পাঠদান স্থগিত রাখা হয়। বিশেষত এর কারণ ছিল, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট টাইফুন ইয়াগির তান্ডব। জলবায়ুসংশ্লিষ্ট কারণে শিশুদের পড়াশোনা সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এর শিকার হয়েছে ১২ কোটি ৮০ লাখ শিশু।
সবচেয়ে বেশি ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ক্ষতির মুখে পড়ে ভারতে। কারণ ছিল তাপপ্রবাহ। বাংলাদেশে ক্ষতিতে পড়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ শিশু। কারণ ছিল একই। ইউনিসেফ বলছে, তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় সামনের বছরগুলোয় ক্ষতির মুখে পড়া শিশুর সংখ্যা সম্ভবত বাড়বে। সংস্থাটি আরও বলছে, জলবায়ু ও পরিবেশগত ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে বাস করে প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) শিশু, যা বিশ্বের মোট শিশুর অর্ধেক।
ইউনিসেফের অনুমান, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু সংকটের পেছনে দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বর্তমান হারে অব্যাহত থাকলে ২০০০ সালের তুলনায় ৮ গুণ শিশু ২০৫০ সালে তাপপ্রবাহের শিকার হবে। এ ছাড়া একই সময় ব্যাপক বন্যার ক্ষতিতে পড়তে পারে ৩ গুণের বেশি শিশু ও দাবানলের প্রভাবে পড়তে পারে ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি শিশু।
ইউনিসেফের আশঙ্কা, চরম আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রভাবের শিকার হওয়ার বাইরেও কিছু শিশু, বিশেষ করে মেয়েশিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে পড়তে পারে।ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তাদের ১০ বছর বয়সে এসেও ঠিকমতো পড়া পড়তে পারে না। ইউনিসেফ বলছে, ‘জলবায়ুজনিত ঝুঁকি এ বাস্তবতাকে বাড়িয়ে তুলছে।