জামালগঞ্জের পাকনা হাওরে জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে হাজারো কৃষকের সোনালী স্বপ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:১০:২৪ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, পাকনা হাওর (সুনামগঞ্জ) থেকে ফিরে:
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ পাকনা হাওরের ফেনারবাঁক গ্রামের সামনের অংশে জলাবদ্ধতার কারণে হাজারো কৃষকের সারা বছরের সোনালী স্বপ্ন ডুবে আছে। এই হাওরে এখনো কোথায়ও হাটু পানি ও উরু পানি থাকার কারণে ধানের চারা রোপন করতে পারছেন না কৃষকরা।
জামালগঞ্জের সর্ববৃহৎ বোরো ধানের ভান্ডার খ্যাত পাকনা হাওরে উপর অংশের জমি রোপন করলেও জলাবদ্ধতার কারণে হাজার- হাজার কৃষক হাওরের বাকী অংশে বোরো ধানের জমিতে চারা রোপন করতে পারছেন না। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছর বৈশাখ শেষে কৃষকদের বাঁধার পরেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন গজারিয়া স্লুইচ গেইট খুলে দিলে সুরমা নদী থেকে পানির সাথে কাঁদা মাটি এসে পলি পরে গজারিয়া স্লুইচ গেটের খাল ও পাঠামারা খাল ভরাট হয়ে যায়। এ কারণে চলতি বোরো মওসুমে হাওরের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে বোরো আবাদ চরম ব্যাহত হচ্ছে।
পাকনা হাওরে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে প্রায় ৬৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বোরো আবাদ করতে পারছেন না হাজার হাজার কৃষক। গজারিয়া স্লুইচ গেটের খাল ও পাঠামারা খাল খনন না করলে হাওরে বোরো ফসল ফলানো সম্ভব হবেনা।
সাধারণত মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরোটাই ধানের আবাদ শেষ হয়। চলতি বছর অনেকেই ধান রোপণ করতে পারছেন না। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ২০-৩০ গ্রামের কৃষক ও গৃহস্থরা। জানা গেছে, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, ভীমখালী ইউনিয়ন, ফেনারবাঁক ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষকরা পাকনার হাওরে বোরো আবাদ করে থাকেন। দেশের খাদ্য চাহিদা ও অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে এই বোরো ফসল। কিন্তু হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরজমিনে পাকনা হাওর ঘুরে দেখা গেছে, এ হাওরে পানি নিষ্কাশনের রাস্তায় গজারিয়া স্লুইসগেট ও পাঠামারা খালের মুখ হয়ে ঢালিয়া স্লুইসগেট পর্যন্ত পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। হাওরে মাঝখানেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে, সেখানে ফসল লাগানো সম্ভব নয়।
স্থানীয় কৃষক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, আমার এখনো দুই তিন হাল জমি পানির নিচে রয়েছে। কিভাবে করব কোন দিশা পাচ্ছি না। গজারিয়া গ্রামের কৃষক লাল হোসন ও আমির হোসেন প্রবাল বলেন, এই গজারিয়া নদীর স্লুইচ গেটের সামনের অংশে গত বছর দুই কোটি টাকার খনন কাজ নামমাত্র করার কারণে ও বৈশাখ মাসের শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন স্লুইচ গেইটের ঢালা ছেড়ে দেওয়ার জন্যই পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। তাই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না বিধায় পাখনা হাওরের শত শত হেক্টর জমি এখন পানির নীচে। হাওরের পানি নিষ্কাশন করা না হলে বোরো আবাদ বিলম্বিত হবে। এভাবে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ উপজেলাসহ কয়েকটি হাওরে পানি না নামায় বোরো আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে।
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের সমাজকর্মী জুলফিকার চৌধুরী রানা বলেন, কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে এলাকাবাসীকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছি হাওরে। চলতি বছর পাঠামারা খাল ও গজারিয়া খাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে ১৫-২০ গ্রামের হাজারো কৃষক তাদের ধান রোপণ করতে পারছেন না। এখনো কৃষি জমি গুলো নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। তিনি সরকারের নিকট দ্রুত খালগুলো খননের দাবী জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী (জামালগঞ্জ অংশের) জাহিদুল ইসলাম বলেন, গজারিয়া সুইচ গেইট খুলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সুইচগেটের মুখ থেকে পাটামারা হয়ে ডালিয়া পর্যন্ত দ্রুত খনন করা প্রয়োজন। না হয় দিন দিন কৃষকের সমস্যা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। অচিরেই এটিকে নিয়ে একটি প্রস্তাবনা আকারে জেলা প্রকৌশলী মহোদয়ের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, পাকনার হাওরসহ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতা দুর করতে পাউবোকে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পাকনা হাওরের পানি অপসারণ করা প্রয়োজন। না হয় বোরো আবাদ ব্যহত হবে।
পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কয়েকটি হাওরে পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা কাজ করছি। যেখানে খনন করে পানি অপসারণ করা প্রয়োজন সেখানে প্রকল্প হাতে নিয়ে খননের উদ্যোগ নিচ্ছি।