স্রোতের প্রতিকূলে সংগ্রামের সাহসিকতা জাতি ভুলবে না : এসএমপি কমিশনার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:০৬:০১ অপরাহ্ন
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ রেজাউল করিম পিপিএম-সেবা বলেছেন, ৭১ পরবর্তী ২য় স্বাধীনতা খ্যাত জুলাই বিপ্লবে স্রোতের প্রতিকূলে থেকে সংগ্রাম পত্রিকার সাহসিকতা জাতি ভুলবে না। জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত শিফা কামনা করে তিনি বলেন, বিগত সরকার শুধু পুলিশ নয়, পুরো প্রশাসন যন্ত্রকে জনগণের বিপরীতে গিয়ে দলদাসে পরিণত করেছে। যার ফলে কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের এমন নৃশংস হত্যাকান্ডে আমরা লজ্জিত।
তিনি গতকাল শনিবার সিলেট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দৈনিক সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী) উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এসএমপি কমিশনার বলেন, তৎকালীন পুলিশের উচ্চপদস্থ কতিপয় কর্মকর্তার কারণে পুরো পুলিশ বাহিনী কলুষিত হয়েছে। টানা ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে আরো সময়ের প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সকল সরকারই চায় অনুগত পুলিশ। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে পুলিশকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাবের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এর কিছুটা নমুনা দেখানো হয়েছে।
দৈনিক সংগ্রামের সিলেট ব্যুরো প্রধান কবির আহমদের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক খালেদ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, বাংলাদেশ বেতার সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তারিক, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ ও দৈনিক প্রভাতবেলার সম্পাদক কবীর আহমদ সোহেল।
হাফিজ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ রাহাতের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সমন্বয়ক আবু সাঈদ ও শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের সমন্বয়ক দেলওয়ার হোসেন শিশির, দৈনিক সংগ্রামের বড়লেখা প্রতিনিধি কাজী রমিজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, সিলাম রিসোর্টে অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সেই ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অসামাজিক কার্যকলাপ যেমন অপরাধ, তেমনী কোন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়াও অপরাধ। এসবের অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। চাঁদাবাজদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত। নতুবা অন্যায়কারীরা প্রশ্রয় পাবে। অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। নগরীর সাগরদিঘীরপারের ড্রিম সিটি দখলের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। আগে এক পক্ষের দখলে ছিল, নতুন করে আরেকপক্ষ দখলের চেষ্টা করতে গিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সিলাম রিসোর্ট কা- ও ড্রিমসিটি সংঘর্ষের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা টানা ১৬ বছর শত শত মিথ্যা মামলায় কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর চিহ্নিত ফ্যাসিস্টরা এখনো বুক ফুলিয়ে চলছে। আমরা ফ্যাসিস্টদের মতো মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় বিশ^াসী নয়। তবে প্রকৃত অপরাধী, অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার ও বিচার চাই। সকল অস্ত্র উদ্ধার চাই। আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে সকল ফ্যাসিস্টকে বাদ দিতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে।
সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ছাত্ররা আমাদের অগ্রগামী হয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। আমরা টানা আন্দোলন সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় তাদের সাথে ছিলাম। অথচ ফ্যাসিস্টদের পতনের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিপ্লবীদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ফলে আমাদের জন্য সামনে আরো বড় বিপদের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আমাদের বিভক্তির কারণে সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সময় থাকতে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, দেড় দশক পর আমরা বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ফ্যাসিস্টের দোসর সাংবাদিকদের সাথে আমাদেরকে এখনো চলতে হচ্ছে। যারা আমাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে তাদের নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। যতটা সম্ভব তাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা টানা ১৬ বছর সীমাহিন জেল-জুলুম নিপীড়ন সয়েছি। আর পতনের ৫ মাস যেতে না যেতেই ফ্যাসিস্টরা প্রকাশ্য ঘুরছে। তারা ফেইসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় অল্প সময়ের মধ্যেই ওরা রাজপথে মিছিলে নেমে যাবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতৃবৃন্দকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।