আমেরিকাজুড়ে অভিযান, অভিবাসীদের মাঝে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৮:১৭:৪২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন অবৈধ অভিবাসীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ১ হাজার ১৭৯ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ জনে, যা সফলতার শুরু হিসেবে দেখছেন অভিবাসী প্রতিরোধে মোতায়েন মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার তারা ১ হাজার ১৭৯ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগের দিন রোববার ৯৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ায় তারা এ অভিযান করছেন।
এছাড়া রোববার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ৬০০ জনেরও কম অভিবাসী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংখ্যাটি আশ্চর্যজনকভাবে কম।
অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক :
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাঁদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা-বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে।
সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ওয়াল্টার ভালাদারেস নামের ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইসিইর সদস্যরা। তিনি হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তবে তাঁর বৈধ কোনো নথিপত্র নেই। সিএনএনকে ওয়াল্টারের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াল্টারের ভাই এডউইন ভালদারেস বলেন, ওয়াল্টার নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আটলান্টার উপকণ্ঠে লিলবার্ন এলাকায় চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। ওয়াল্টারের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই। একবার শুধু লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সে ঘটনায় জরিমানাও পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আটলান্টার উপকণ্ঠে টাকার এলাকা থেকে নথিপত্রহীন আরেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একটি গির্জায় ছিলেন। ওই গির্জার যাজক লুইস ওরতিজ সিএনএনকে বলেন, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে তিনি দেখতে পান গির্জার কয়েকজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেন আইসিই সদস্যরা।
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।