সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:২৪:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় থাকলেও আবারো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। ওই মাসে কেনার চেয়ে ভাঙানোর চাপ বেশি ছিল। ফলে নিট বিক্রি বড় ধরনের ঋণাত্মক হয়।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত নভেম্বরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চয় করতে পারেনি। আবার গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এছাড়া ব্যাংক আমানত ও সরকারের বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল–বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে সুদহার বাড়ানোর কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় তা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের নিট বিক্রি ঋণাত্মক বেড়েছে এক হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইতে দুই হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, আগস্টে দুই হাজার ৩৬ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা নিট বিক্রি ইতিবাচক ছিল।
গত নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি নেতিবাচক হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) নিট বিক্রি ইতিবাচক রয়েছে। এ সময় নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় নিট বিক্রি ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের গড়পড়তা আয় কমে গেছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা যে পরিমাণ আয় রাখার কথা, তা রাখতে পারছে না। আরো অনেকে জমানো টাকা ভেঙে ফেলছেন তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য। অন্যদিকে সম্পদশালীদের মধ্যে যারা নামে-বেনামে একসময় সঞ্চয়পত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতেন, তাদেরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট স্থিতি ছিল তিন লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।
এদিকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহারে পরিবর্তন এনেছে। প্রথমবারের মতো মার্কেট রেট বা বাজারে প্রচলিত সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৫টি জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার পুননির্ধারণ করেছে। এতে প্রত্যেকটি সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা বেড়েছে। এতদিন যাবৎ তিন ধাপে বিনিয়োগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ ছিল। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা পেতেন সবচেয়ে বেশি সুদ। এরপর ১৫ লাখ এক টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে এক ধরনের সুদহার এবং ৩০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগে আরেক ধরনের সুদহার ছিল। বিষয়টি এমন ছিল যে, যার যত বেশি বিনিয়োগ, তার জন্য সুদহার তত কম।
নতুন প্রজ্ঞাপনে তিন ধাপের পরিবর্তে নতুন দুই ধাপ তৈরি করা হয়েছে। একটি ধাপ ৭.৫০ লাখ টাকা; আরেকটি ৭.৫০ লাখ টাকার বেশি থেকে শুরু। এছাড়া আগের মতো বিনিয়োগের মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়নের ক্ষেত্রে বছরভিত্তিক হারে মুনাফা পাবেন গ্রাহক।
তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অধীন চারটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে এখন সর্বোচ্চ সুদহার ১২.৪০ শতাংশ, যা আগে ছিল ১১.২৮ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ১২.৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এই সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১.০৪ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫৫ শতাংশ, এটির আগে সুদহার ছিল ১১.৭৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় বা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়া পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২.৫০ শতাংশ, যা আগে ছিল ১১.৫২ শতাংশ।
এর বাইরে জনসাধারণের সঞ্চয়ের আরেকটি ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি হচ্ছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে টাকা জমা রাখা। এই মেয়াদি হিসাবের সুদহারও পুননির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে যারা ডাকঘরে সঞ্চয় করবেন, তারা ১২.৩০ শতাংশ হারে সুদ পাবেন- যা আগে ছিল ১১.২৮ শতাংশ।