২৩ সালের ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন’ প্রয়োগ: চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১০:৫২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে রোগীদের অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহৃত মেডিকেল ও ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্টের ৯৫ শতাংশই আসছে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। বর্তমানে বছরে আমদানি হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী। ভ্যাট-ট্যাক্স ও লভ্যাংশ মিলে এর বাজার দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়।
এতদিন এসব সামগ্রী আমদানির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরনের লাইসেন্স গ্রহণ, নিবন্ধন বা অনুমতি নিতে হতো না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে সহজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমদানি করতে পারতেন আমদানিকারকরা। কিন্তু ২০২৩ সালে ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন’ প্রণয়নের পর এসব সামগ্রী ওষুধ ও কসমেটিকসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ওষুধ ও কসমেটিকসের মতো এসবের আমদানি ও উৎপাদনেও বেশকিছু শর্ত বিধিবিধান আরোপ করা হয়। ইতিমধ্যেই এসব শর্ত পূরণে বিভিন্ন হাসপাতালকে চিঠি দিতে শুরু করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অধিদপ্তরের নিবন্ধন ব্যতিরেকে কেউ কোনো চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কিনতে ও ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্দেশ অমান্য করা হলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ১০ বছরের কারাদ- অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
এমন অবস্থায় নতুন আইনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আমদানিকারকরা। তাদের মতে, কোনোভাবেই চিকিৎসা সরঞ্জামাদিকে ওষুধ ও কসমেটিকসের মধ্যে ফেলা যাবে না। এতে আমদানি জটিলতা, ব্যয় ও সময় বেড়ে যাবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সব প্রক্রিয়া শেষে একটি পণ্য আমদানিতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৩ মাস। রেজিস্ট্রেশন ফি-সহ জটিল ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে ১০-১৫ শতাংশ। এতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে রোগীদের। চাহিদা অনুপাতে পণ্য আমদানি হবে না। এতে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে পণ্য আসার পরিমাণ বর্তমান ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০-২০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এতে বৈধ আমদানিকারকের সংখ্যা ও আমদানি কমবে। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে জনস্বাস্থ্য।
এমন অবস্থায় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানি ও উৎপাদনে স্বতন্ত্র আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং আমদানি নিয়ম-নীতি সহজ করার দাবিতে পথে নেমেছে আমদানিকারকদের চারটি সংগঠন। এ নিয়ে তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সর্বশেষ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ডায়াগনস্টিক রিএজেন্ট অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খান আবু বলেন, আমাদের মূল দাবি মেডিকেল ডিভাইসের জন্য স্বতন্ত্র আইন ও বিধিমালা করুক। কারণ এটা ওষুধ ও কসমেটিক না। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে এখন সংস্কার কমিশনে আমাদের দাবি জমা দেব। কারণ এটা বৈষম্যমূলক নীতি। ওষুধ ও কসমেকিটসের মধ্যে ডিভাইস ফেলা যৌক্তিক না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমইআইএসএ) সাধারণ সম্পাদক আরশেদুল আলম পুলক বলেন, এই আইন শুধু ওষুধ ও কসমেটিকসের জন্য বলবৎ। যেহেতু মেডিকেল ডিভাইসের জন্য আলাদা কোনো আইন নেই, তাই অধিদপ্তর এই আইনের মধ্যে আমাদের ফেলে দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইসের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। যথেষ্ট বড় বাজার, সেখানে আলাদা একটা বিধি থাকা উচিত। আলাদা আইন থাকা উচিত। ওষুধ আইনের কারণে আজ আমরা ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ রকম মেডিকেল ডিভাইসের জন্য একটি আলাদা আইন বা বিধি হলে আমরাও এই ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।
তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন মেডিকেলে ডিভাইসকে ওষুধ জাতীয় পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, সবদেশেই মেডিকেল ডিভাইস ওষুধ হিসেবেই গণ্য হয়। কারণ এটিও শরীরে প্রবেশ করে। একই আইন দিয়ে এসব সামগ্রীও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং আইনে কোনো সমস্যা নেই। যদি কোথাও কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন-বিয়োজন করতে হয়, তা হলে সেটা আইন মন্ত্রণালয় দেখবে। আমাদের কাজ আইন বাস্তবায়ন করা।