গুম খুনে জড়িত আওয়ামীলীগের বিচার এদেশের মাটিতে হবে : সুনামগঞ্জে জামায়াত আমীর
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫:৪২:৫৩ অপরাহ্ন
জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. মো. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যারা খুন করেছে, গুম করেছে তাদের এমন বিচার হোক যাতে জাতি কলংকমুক্ত হয়। আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চাইনা। প্রচলিত আইনেই গণহত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঘুষ আর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের কথা জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা কোন জলমহাল বালুমহাল লুট করে না, চাঁদাবাজি করেনা, ঘুষ, মামলা বাণিজ্য করেনা। কেউ যদি অপরাধ করে তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। ৫ আগষ্টের পর এক দল চাঁদাবাজি, হাট, স্ট্যান্ড দখল করে। বালু লুট করে, জলমহাল লুট করে। এমন সমাজ আমরা চাইনা। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে থাকবেনা ভেদাভেদ। মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই।
আমাদের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্টের পর থেকে টানা ১৫ দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহারা দিয়েছে। সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। গত জালেম সরকার ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় ৮০ ভাগ লোকই ছিলো আওয়ামী লীগের।
ফ্যাসিবাদি সরকার জামায়াতের অফিস সীলগালা করেছে, দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। সর্বশেষ তারা আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছে। শত শত নেতাকর্মীকে বাড়ি ছাড়া করেছে। হত্যা, গুম করেছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে।
জামায়াত কখনো চাঁদাবাজি করেনা দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আপনাদের জানাচ্ছি অতীতে আমরা কখনো চাঁদাবাজি করি নাই। এখন করছি না। ভবিষ্যতেও করবো না। যদি আল্লাহ আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেন, কাউকে চাঁদাবাজি করতেও দেবো না। আমরা দখলবাজি চালাই না, ভবিষ্যতে কাউকে দখলবাজি চালাতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা রাজপথে স্লোগান দিয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা বৈষম্য চাই না, ন্যায়বিচার চাই। আমরা শহীদদের আত্মাকে কথা দিচ্ছি, আল্লাহকে কথা দিচ্ছি, শহীদদের বেঁচে থাকা আপনজনদের কথা দিচ্ছি, আহত পঙ্গু ভাইবোনদের কথা দিচ্ছি, তাদের স্বপ্নের সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
আমাদের পেট বন্ধক দিয়েছি অন্য দেশে। মাথাও বন্ধক দিয়েছি কি না আল্লাহ জানেন। দেশের মেধাবীরা দেশ থেকে পড়াশোনার জন্য গেলে আর ফিরে না। কিন্তু দুথেকে আড়াইশ বছর আগেও আমাদের দেশের উপর মোগলরা বৃটিশরা পর্তুগীজরা ঝাপিয়ে পড়তও ভাগ্য গড়ার জন্য। আমাদের দেশের নেতারা বলেন, দেশের চেয়ে দল বড়। কিন্তু না আমরা দেখি দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়।
ধোঁকাবাজির রাজনীতি যারা করবে তাদের মাধ্যমে দেশের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারককে কি আপনারা দেখেছেন কলা পাতায় ঘুমিয়েছেন। এটা তার পরিণতি। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
জামায়াতের আমীর আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেই আমাদেরকে পাসপোর্ট ভিসা টিকেট ছাড়াই অমুক দেশে তুমুক দেশে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু তারাই এখন পালিয়ে গেলেন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া। আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তা হলে আমরা শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবো। আমরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। যে শিক্ষা হবে কর্মমুখি শিক্ষা। একজন পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথে ঐ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হবে। শিক্ষার সার্টিফিকেট ও কাজ একসাথে দেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগর আমীর ফখরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট শামসউদ্দিন, মোমতাজুল হাসান আবেদ প্রমুখ।